শতবর্ষী মান্না দের প্রতি শ্রদ্ধা

মান্না দে
মান্না দে

হৃদয়ের ফাঁকা জায়গাটুকু ভরাট করে সংগীত। আর সংগীতের ভুবনে কালে কালে অনেক শিল্পীর আবির্ভাব হয়। এমন অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছেন, যাঁদের হৃদয় দিয়ে গাওয়া হৃদয়ের গান অন্তরজুড়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকে। এত কথা, আবেগ-অনুভূতি যখন পৃথিবীর কোণে কোণে, কোটি হৃদয়ে ঝংকার তোলে, ভালোবাসার সেই শিল্পী তখন হয়ে ওঠেন কালজয়ী। এমনই এক সুরের আকাশের ধ্রুবতারা, যিনি প্রীতিতে, ফুটবলে, কফি হাউসে, জীবনের জলসাঘরে, প্রেয়সীর নিশ্বাসের বিষে, ললিতার অনুযোগে, আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। যাঁর নশ্বর দেহখানি ছাই হয়ে পঞ্চভূতে বিলীন না হলে অবিনশ্বর আরও অনেক গানের সৃষ্টি হতে পারত। এ বছর ১ মে তিনি হতেন শতবর্ষী।

তখনো তাঁকে চোখে দেখিনি। তবে কথা আর সুরের ভালোবাসার রাজপ্রাসাদের গাঁথুনি গাঁথা হয়েছিল কচি মনে, কথার সঙ্গে কথা বুনে। সিলেবাসে ভীষণ অমনোযোগী। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। উদাসী বারান্দার ধার ঘেঁষে রাতের আঁধারে যখন জোনাকির ব্যস্ততা, সারা দিন অফিস করা রাঙাদির ক্লান্তি উঠিয়ে নেওয়ার আশ্রয় ছিল রবীন্দ্রনাথ আর মান্না দে।

রাত সাড়ে ১০টায় ইথার তরঙ্গে ভেসে আসত আকাশবাণী কলকাতা। বিবিধ ভারতীর অনুরোধের আসরের এবারের শিল্পী মান্না দে। আর আমার সিলেবাসে মনোযোগী হওয়ার তাল কাটত, ‘আ, শশীকান্ত হচ্ছেটা কী’ (গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুর: নচিকেতা ঘোষ), ‘হয়তো তোমারই জন্য’ (কথা ও সুর: সুধীন দাশগুপ্ত)। তখন কথা নয়, শুধু সুরটাই ভালো লাগত। পূর্ণিমার স্নিগ্ধ চাঁদের আলোর নিচে দিদিদের সঙ্গে বসে শুনতাম, ‘ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে’ (কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর: প্রভাস দে)। কিশোরবেলার সে কী অবাক বিস্ময়। কেননা, শোলক বলার কাজলা দিদির বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদখানাও যে মাতাল হতে পারে তাঁর গায়কিতে। সেই প্রথম মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছিল আমার মল্লিকাবনে, ‘এরই নাম প্রেম এরই নাম প্রেম, তোমার গন্ধহারা ফুল আমার কাছে সুরভি নেবে এরই নাম প্রেম’ (কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর: মান্না দে)। সেই প্রেম মনের ছায়ায় বুনে বুনে পথ হেঁটে বড়বেলায় এসে প্রশ্ন রাখে, ‘বলো তো কে প্রথম কাছে এসেছি, তুমি না আমি’ (কথা: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর: সুধীন দাসগুপ্ত)।

কিন্তু কীভাবে এই বিস্ময়ের সৃষ্টি? উত্তর কলকাতার বনেদি সাংগীতিক পরম্পরার মধ্যে জন্ম নিয়ে সংগীত তাঁর ধমনিতে খেলা করবে—এটি খুব অবাক হওয়ার মতো কোনো ব্যাপার ছিল না। তিরিশের দশকে মহান গায়ক কৃষ্ণ চন্দ্র দে। বাবা পূর্ণ চন্দ্র দে চাইতেন ওকালতি করুন। কিন্তু শিশুকাল থেকে কাকার পেছনে তানপুরা ধরে আর ভারতবিখ্যাত সব গুণী শিল্পী ও ওস্তাদকে কাছ থেকে দেখে শিল্পী মান্না দের কালের লেখন লেখা বোধ হয় হয়ে গিয়েছিল। কাকার কাছে সংগীত বিষয়ে শিক্ষাই মান্না দের জীবনে সবচেয়ে বড় ছাপ। সেটি শিল্পীজীবনের বাঁকে বাঁকে উল্লেখ করে গেছেন।

স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময় টেবিল চাপড়িয়ে গান করতেন প্রবোধ চন্দ্র দে (মান্না দে)। তাঁর বন্ধুরা বলত, প্রবোধ, তুই আন্তকলেজ সংগীত প্রতিযোগিতায় নাম দে। মান্না দে জানালেন কাকার বারণ। কিছুতেই করতে দেবেন না। বন্ধুরা গেলেন কাকার কাছে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি চান না, কটা মেডেল জিতে প্রবোধ বড় গাইয়ে হয়ে যাক। শেষ পর্যন্ত কলেজের প্রিন্সিপাল ড. আর্কুহার্টের চিঠি লেখার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সুরাহা হয়। এখানেই শেষ নয়। এর জন্য দুই মাস, দশ সাবজেক্টের ওপর ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পা, গজল, কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালি, আধুনিক বাংলা গানের ওপর রেওয়াজ করতে হয়েছিল তাঁকে। বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরপর তিনবার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জেতার পর কাকা তাঁর সাধের মানাকে সংগীতের অর্জুন মনোনীত করেন। এই মানাই চিরকালের মান্না দে হয়ে ওঠেন।

কাকার হাত ধরেই মুম্বাই যান। তবে ভেতর থেকে একটা ভীষণ তাড়না ছিল তাঁর যে তাঁকে সর্বভারতীয় গাইয়ে হতেই হবে। তিনি শুধু বাংলা গান করতে চাননি। ভারতবর্ষে যত রকম গানবাজনা আছে, তিনি তা করতে চেয়েছিলেন। আর মুম্বাই ছিল এমন এক জায়গা, যেখানকার মূলমন্ত্র হলো সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। নিজেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তিনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন।

মুম্বাইতে তখন মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, তালাত মাহমুদ, দুরানি, খান মাস্তানা মুকেশজির সঙ্গে টিকে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সে জন্য প্রথমে ধর্মীয় গান ও ক্যারেক্টারের গান গাইতে হতো। চাপা ক্ষোভ ছিল। এমন সময় কাছে পেলেন সুলোচনাকে। তিনি মান্না দেকে অভয় দিলেন, ক্ষতি কী যদি এই গানগুলো থেকে এমন গান বেরিয়ে আসে। যেমন: ‘এ ভাই যারা দেখকে চলো’ (মেরা নাম জোকার), ‘ও মেরে জহুরে জাবি তোজে মালুম নেহি’ (ওয়াক্ত/বক্ত) গানগুলো নায়কের লিপে না হয়েও সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তারপরও একটা জেদ চেপে ছিল যে সিচুয়েশনাল গানের তকমা তাঁর সরাতেই হবে। অবশেষে রাজ কাপুরের ‘শ্রী ৪২০’ নায়কের লিপে যাত্রা শুরু আর বাকি সব ইতিহাস। ‘পিয়ার হুয়া একরার হুয়া, এ রাত ভিগি ভিগির’ (চুরি চুরি) সেটে প্রোডিউসার চেট্টিয়ার সাহেব, মুকেশ জিকে দিয়ে গাওয়ানোর জন্য রেকর্ডিং বাতিল করে দিয়েছিলেন। সেদিন তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ কাপুর আর শংকর জয়কিষন, যা সর্বভারতীয় মান্না দে হওয়ার পরও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন তাঁর বিভিন্ন ইন্টারভিউতে।

সলীল চৌধুরীর তৈরি সেই গান, যে গানে জীবনের পরছাইয়ার দেখা মেলে। ‘জিন্দেগি ক্যায়সে এ পেহিলি হায়, কভিতো হাসায়ে কভিতো রুলায়’ (আনন্দ)। বিলেতি খোলসের ভেতরে আপাদমস্তক বাঙালি সেই মান্না দেকে বাংলায় প্লেব্যাক করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক দিন। তবে হিন্দিতে একটি কথা আছে, দের আয়ে পর দুরস্ত আয়ে। বাংলার মান্না দের জন্য কথাটি সম্পূর্ণ সত্য।

নীতিন বোসের ‘অমর ভূপালি’ ছবিতে সাতটি গান দিয়ে বাংলা প্লেব্যাকে এন্ট্রি মান্না দের। এরপর বেশ কিছুদিন বিরতি ছিল। তবে এর মধ্যে লতা মঙ্গেশকর ইচ্ছা পোষণ করলেন বাংলা গান গাইবেন। যথারীতি গান লেখা হলো, লিখেছেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। এইচএমভিতে রেকর্ডিংয়ের দিন ধার্য হলো, কিন্তু অনিবার্য কারণবশত লতা মঙ্গেশকর গাননি। পরে বাধ্য হয়ে গানগুলো রেকর্ড করেন মান্না দে নিজেই। ‘কত দূর আর নিয়ে যাবে বলো কোথায় পথের প্রান্ত’। রিলিজ সময় ১৯৫৩। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় সুর করেছেন মান্না দে নিজে। ওই রেকর্ডিং হিট হওয়ায় এইচএমভি সিদ্ধান্ত নিল, এ রকম একজন সেলিং আর্টিস্টকে নিয়ে প্রতি পূজায় গান হওয়া দরকার। এইচএমভির ম্যানেজার পাঞ্জাবি ভদ্রলোক লাল সাহেব, পুজোর গান রেডি করতে বললেন মান্না দেকে। লিখবে কে? তখনো পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়নি মান্না দের। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখলেন ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, তারই মাঝে প্রেম যেন গড়ে খেলা ঘর’। ১৯৫৬ সালে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় আর মান্না দের সুরে এতটাই মাতিয়েছিল বাঙালিকে; পূজা মানেই মহালয়ার ভোর আর মান্না দের গানে সারা দিন। এটা শেষ হয়ে যায়নি এখনো।

গরম রোদের এক তপ্ত দুপরে মান্না দের বাড়ির কড়া নাড়ছিলেন এক অপরিচিত ভদ্রলোক। মান্না দে দরজা খোলেন। ভদ্রলোক দূর থেকে এসেছেন, গানটান লেখেন জেনে ভেতরে আসতে বললেন। হাতে শরবত ধরিয়ে দিয়ে, গানটি চেয়ে নিলেন এবং নিজেই সুর করলেন। ১৯৫৮ সালে রিলিজ হলো, বঙ্কিম ঘোষের কথা আর স্বয়ং মান্না দের সুরে সেই অসাধারণ গান—‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়’। এরপর পত্র মারফত শুরু হলো মান্না দে-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যায়। চিঠিতে মান্না দের অনুমতি নিয়ে, চিঠিতেই গান পাঠালেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘আমার না যদি থাকে সুর, তোমার আছে তুমি তা দেবে’, তারপর একে একে ‘তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ দিতে পারোনি’। আরও কিছু হৃদয় দিয়ে গাওয়া কিছু গান—‘আমায় আকাশ বলল’, ‘আমি ফুল না হয়ে’, ‘এ নদী এমন নদী’। ‘আবার হবে তো দেখা’ (কথা-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়)। ঋদ্ধ হতে থাকল বাংলা আধুনিক গান।

দিনরাত পরিশ্রম করতেন তখন। একসঙ্গে অ্যাসিস্ট করছিলেন শচীন দেববর্মন, অনিল বিশ্বাস ও ক্ষেমচাঁদ প্রকাশকে। সেই সময় সুধীন দাশগুপ্ত এলেন মুম্বাইয়ে। ‘শঙ্খবেলা’ ছায়াছবিতে প্লেব্যাক করানোর প্রস্তাব নিয়ে। সরোজ কুমার দের একান্ত ইচ্ছা উত্তমকুমারের লিপে গাইবেন মান্না দে; গানও নিয়ে এসেছেন সুধীন বাবু, কিন্তু কোথাও তারিখ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পনেরো দিন মুম্বাই থাকার পর, নওশাদ সাহাবের জন্য নির্ধারিত তারিখে তার ছেড়ে দেওয়া সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দশটার ভেতরে রেকর্ড করলেন ‘শঙ্খবেলা’র সেই বিখ্যাত গানগুলো। লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে মান্না দে। আর তিনি জানান দিলেন, আমি আগন্তুক, আমি বার্তা দিলাম। বাংলা সিনেমায় আসছেন তিনি। এরপর গাইলেন নচিকেতা ঘোষের সুরে, ‘আমার চিরদিনের’ (ছবি: চিরদিনের), ‘হাজার টাকার ঝাড়বাতিটা’ (ছবি: এন্টনি ফিরিঙ্গী), ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘তুমি একজনই শুধু বন্ধু আমার’, ‘ওগো বর্ষা’। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের মধ্যে একটা মেধার প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দিয়েছিলেন মান্না দে। মেধার অনেক স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁরা। গাড়িতে বসে মান্না দের মুখে ঠুমরি শুনে ‘শ্যাম ঘুনঘট কি পাট খুলোরে’ শুনে লিখে ফেললেন, ‘ললিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বল না’। একবার বেড়াতে গিয়ে, ভুল বাড়ির, ভুল দরজায় সুন্দরী নারী দেখে লিখলেন, ‘ও কেন এত সুন্দরী হলো’। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখলেন ‘আমি যামিনী, তুমি শশী হে’। সুর করেছিলেন অনিল বাগচী।

অল্প কাজ কিন্তু বড় কাহিনির জন্ম দিয়েছিল, সুপর্ণ কান্তি ঘোষের সঙ্গে। কফি হাউসের পেয়ালারা খালি থাকে না। সেদিনের সেই চুমুক তরঙ্গ খেলে যায় বাঙালির ঠোঁটে আজও, লারা লালাল লা, লারা লালা লালাল লা লারা লালা লালা।

মান্না দে
মান্না দে

নানা পাটেকারের সংলাপ নিয়ে বলি, এ মান্না দা ভি কামাল কী হে। কখনো পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে টিজ করেন। ‘কে তুমি নন্দিনী’ (কথা ও সুর সুধীন দাশগুপ্ত) কখনো সবই সঁপে দেন সুলোচনাকে ‘সব তোমারই জন্য সব তোমারই জন্য’, কখনো বিরাট পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে বলেন, ‘মার স্নেহ কাকে বলে জানি না, সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই, সে আমার ছোট বোন’ (কথা-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর সুপর্ণ কান্তি ঘোষ), কখনো ছোটবেলাকে বায়োস্কোপে তুলে আনেন, ‘আমি হারিয়েছি মোর ছোট্টবেলা হারাইনি তো মাকে’ (পুলক-সুপর্ণ) আবার কখনো পিতৃত্ব জাগিয়ে তোলেন। নিজের কথা বলছি, বড় ভাইয়ের বড় মেয়েটার জন্য মায়া পড়ে থাকত। আমারই চোখের সামনে বড় হয়েছে। যেতে পারিনি নীপার বিয়ের সময়। সারা রাত আশ্রয় খুঁজেছি মান্না দের কাছে। ‘আজ মঙ্গলদীপ জ্বলেরে তোর মঙ্গল চেয়ে, তবু কেন জল আসে রে আমার দুচোখ বেয়ে, তুই যে আমার পুতুল পুতুল...’। বাংলা গানে এমন বন্ধু আর কে আছে? (কথা: গৌরীপ্রসন্ন, সুর: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)।

যেন গুরুদেবের মতো জীবনের প্রতিটি অনুভূতিকে আপন করে নিয়েছেন তাঁর গলার গভীরতায়। যান্ত্রিক বর্তমানকে যিনি ফিনিক্স পাখির মতো অতীত দেখিয়ে আনেন, তিনি মান্না দে। যে অতীত অন্যের বাহুতে আলিঙ্গনবদ্ধ। সে না চাইলেও উঠে আসে আমার কাছে প্রতি রাতে। ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’ (কথা: মুক্তি রায় চৌধুরী, সুর: প্রভাস দে) বলো অতীত, ‘কী তার জবাব দেবে, যদি বলি আমিই কি শুধু হেরেছি, তুমিও কি একটুও হারোনি’।

যিনি বর্তমান জীবনকে প্রতিদিন বাঁচতে বলেন, তিনিও মান্না দে। আবার তিনিই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা। ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সংগীত ভেসে আসে’। (কথা ও সুর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়)।

অনেক কথার মরণ হয়ে পরে আজ হৃদয়ের কথাগুলো বলে গেলাম। মান্না দে সেই রাজা, যাঁকে আমরা হারিয়েছি, কিন্তু মুকুটটা তো আছে আমাদের হৃদয়জুড়ে। আছে সেই সুরেলা সফর। দীর্ঘজীবী হোক হৃদয়ের ফাঁকা জায়গাটুকুতে, ‘হৃদয়ে লেখা নাম’ (কথা: গৌরীপ্রসন্ন, সুর: নচিকেতা ঘোষ) প্রতিদিনের জীবনে। অনুভূতি বেঁচে থাকুক আমাদের প্রেম, বিরহ, ফুটবল, কফিহাউস, জীবনের জলসাঘরে।

‘তৃণের চেয়েও যিনি বিনত, তরুর মতো যিনি সহিষ্ণু, যিনি নিজে মান প্রত্যাশী না হয়ে অন্যকে মান দেন, ঈশ্বর স্তরে কেবল তাঁরই আছে অধিকার, কেবল ঈশ্বর স্তরে, নয় শিল্পের স্তরেও’—শঙ্খ ঘোষ।

সেই শিল্পের প্রতি আমার শতকোটি প্রণাম। শুভ শততম জন্মবার্ষিকী মান্নাদা!


হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব: সাংস্কৃতিক কর্মী। টরন্টো, কানাডা।