লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্যাপন

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

বৈশাখ মাস প্রায় যায় যায়। কিন্তু তাতে কী? আমাদের প্রাণের উৎসব যে এখনো করা হলো না। সবার ব্যস্ততা, হল পাওয়া—সবকিছু মিলে ঠিক হলো মে মাসের ৪ তারিখেই লন্ডনে হলিক্রস পরিবার বৈশাখ উদ্‌যাপন করব। সেই চিন্তা থেকেই শুরু হলো আমাদের প্রস্তুতি। প্রথমে কারও একজনের বাসায় ঘরোয়াভাবে করার ইচ্ছা হলেও পরে নিশাত বলল, হলে করলে অনেকেই আসতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার রান্না আমরা নিজেরাই করব। অর্থাৎ সবাই কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে আসব। সেই মতোই আয়োজন শুরু হলো। সারাহ নিশাত আর পারিসা—এই তিনজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হলো বাজার, ডেকোরেশন ইত্যাদি। প্রত্যেক সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করে রান্না করে নিয়ে এল।

এদিকে অনুষ্ঠানের যখন তোড়জোড়ভাবে প্রস্তুতি চলছে, তখন হঠাৎ করেই আমাদের ছোট বোন ফারহানা রিংকির বাবা মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ ঘটনায় আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। থেমে যায় আমাদের সব উৎসাহ। কী করব সবাই যখন ভাবছি, তখন রিংকি বলল অনুষ্ঠান বন্ধ না করতে। কারণ, শুক্রবার ওর বাবার কুলখানি হয়ে যাবে। আমাদের সবার প্রস্তুতিও শেষ। আর জীবনটা আসলে থেমে থাকে না, চলতে হয়। যা হোক অনেকটা মন খারাপ নিয়েই সবাই আবার শুরু করলাম।

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় অংশ ছিল আমাদের সোনামণিদের আঁকা ‘একটুকরো বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠান শুরু হয় সবার সম্মিলিতভাবে গাওয়া বৈশাখের গান ‘এসো হে বৈশাখ’ দিয়ে। এরপর সাম্পান আর সামিয়ার দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘আজ মন চেয়েছে’ আমাদের সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। রীমার মেয়ে ওমেরা নাচও সবাইকে মুগ্ধ করেছে। বাচ্চাদের অংশগ্রহণ ছিল মনোমুগ্ধকর। মুনিয়ার মেয়ে নামিরার গাওয়া দেশের গান, সামিয়ার দুই মেয়ের গাওয়া ছড়াগান, রীমার ছেলের নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি আর তানিয়ার দুই মেয়ের নাচ অনুষ্ঠানকে করেছে প্রাণোচ্ছল। বরাবরের মতো মুনিয়া আর পারিসার উপস্থাপনা, শেফালির মঞ্চ মাতানো গান। নাইমার কবিতা আবৃত্তি, আরও আকর্ষণীয় ছিল হলিক্রস স্কুল ও কলেজের ছাত্রীদের স্বামীদের সম্মিলিত গাওয়া গান। ঈশিতার স্বামীর গাওয়া গান। এ ছাড়া সাম্পান ও তার স্বামী অভির দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া গান, তানিয়ার নৃত্য। সবকিছু মিলিয়ে আয়োজনটি ছিল অসাধারণ। হলিক্রসের ছাত্রী না হয়েও অমিতের গাওয়া ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটা যেন আমাদের সবাইকে সেই স্কুলজীবনের অতীতে নিয়ে গিয়েছিল।

আমাদের হলিক্রস পরিবারের বৈশিষ্ট্য হলো আমরা যেকোনো অনুষ্ঠানের সবকিছু নিজেরাই করে থাকি। যেমন আলপনা করা, সাজানো থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের পরিচালনা, নাচ–গান, কবিতা—সবকিছুই এই পরিবারের ছাত্রীরা নিজেরাই করে থাকে।

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

দুপুরের নানান পদের ভর্তা, মাছ, মাংস, চাটনি দিয়ে ভাত খেয়ে আবার বিকেলের নাশতায় ছিল দইবড়া, ছোলা ভুনা, ব্রাউনি, ঘরে পাতা দই, সন্দেশ, মিষ্টি, চা, কফি।

এরপর ছিল ফটোসেশন। আমাদের নির্ধারিত হলের বাইরে ছিল বিশাল মাঠ আর বাচ্চাদের খেলার জায়গা। প্রকৃতির মাঝে তাই হারিয়ে যেতে কারও মানা ছিল না।

সবশেষে ছিল র‍্যাফল ড্র আর বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণ ছিল গুডি ব্যাগ।

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফটো স্কেচ করা। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে শ্রদ্ধেয় এস এ আসাদউল্লাহ ভাই সবার স্কেচ করে দিয়েছেন কোনো রকম বিরক্তি প্রকাশ না করে।

সবশেষে শেফালিকে ধন্যবাদ দিতে চাই খুব অল্প সময়ে স্পনসর জোগাড় করে খুব সুন্দর করে মিউজিক ইন্সট্রুমেন্টের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য।

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও আমি যখন হলিক্রস পরিবারের সঙ্গে মিলিত হই, মনে হয় যেন খুব কাছের মানুষদের কাছে এসেছি। এরা যেন আমার কাছে ঠিক অক্সিজেনের মতো। ভালো লাগে তোমাদের সবার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো। আমি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি তোমাদের সঙ্গে। সবার নাম উল্লেখ করতে না পারলে সবাই আছো আমার লেখায়, আমার হৃদয়ে। আবার দেখা হবে, এ প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম।

সবাইকে ধন্যবাদ।

লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
লন্ডনে হলিক্রস পরিবারের বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য