টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেক

টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য
টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য

বৃষ্টিস্নাত শরতের স্নিগ্ধ বিকেল। স্থান টরন্টোর চায়নিজ কালচারাল সেন্টারের হলরুম। বিরাট হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ। সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তাঁদের পরিবার–পরিজন। তাঁরা সমবেত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা ইনকের নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটির অভিষেক ও পুনর্মিলনীতে। অনুষ্ঠানে অভিষিক্ত হলো ২৯ জনের একদল প্রাণবন্ত ও কঠোর পরিশ্রমী নেতৃত্বের। শুরু হলো আগামী দুই বছরের জন্য তাদের আনুষ্ঠানিক পথ চলা। শুরু হলো সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের সব ব্যঞ্জনা।

এ অভিষেক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২০ এপ্রিল শনিবার। শেষ বিকেলের পড়ন্ত সূর্য। ডুব ডুব ভাব। এরই মধ্যে হলরুমে উপচে পড়া ভিড়। অল্পক্ষণের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থল রূপ নেয় চাকসু মিলনায়তনে। গল্পে-আড্ডায় মেতে ওঠেন সবাই। অনেক দিন পর সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এবারের পুনর্মিলনীর ব্যাপ্তি ও স্বতঃস্ফূর্ততা এতই প্রবল ছিল যে অনেকেই এসেছেন অন্য প্রদেশ থেকে। শ্রদ্ধেয় আলমগীর ভাই ও চবির সাবেক শিক্ষিকা ড. রেবেকা সুলতানা এসেছেন কুইবেকের মন্ট্রিয়েল থেকে, শ্রদ্ধেয় ড. আজিজ ভাই ও শামীমা ভাবি এসেছেন নায়াগ্রা থেকে, অং দা ও নার্গিস আপা এসেছেন অটোয়া থেকে, চবির সাবেক শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ড. কাঞ্চন কুমার পুরোহিত এসেছেন কিচেনার থেকে, সরদার আবদুল জব্বার এসেছেন মিল্টন থেকে।

টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য
টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য

এ ছাড়া হৃদয়ের টানে সুদূর নিউইয়র্ক থেকে ছুটে এসেছেন ২০তম ব্যাচের নিয়ন। সবাইকে চমকে দিয়ে সুদূর বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছেন আমাদের সবার প্রিয়ভাজন চবির সাবেক শিক্ষক সংগঠনের উপদেষ্টা শ্রদ্ধেয় সাব্বির চৌধুরী। আরও অনেকে এসেছেন অনেক দূরদূরান্ত থেকে। সংগঠনের প্রতি ভালোবাসা, আনুগত্য আর আন্তরিকতা থাকলে এমনটিই হয়।

দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব ছিল সাংগঠনিক পর্ব। চুয়েকের সহসভাপতি নাট্য অভিনেতা অনুপ সেনগুপ্তের উপস্থাপনায় এই পর্বের শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে। সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী বাহাউদ্দিন বাহার। শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সংগীত। ল্যান্ড অ্যাকনলেজমেন্ট পাঠ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা সৈয়দ ফখরুদ্দীন। বিগত বছরে চবি পরিবারের যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, সাম্প্রতিক ঢাকার অগ্নিকাণ্ডে নিহত, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন এবং নুসরাতের বিদেহী আত্মার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য
টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য

নবনির্বাচিতদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন চবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আহমেদ শফিকুল হক, সাবেক শিক্ষক ড. কাঞ্চন কুমার পুরোহিত, সাবেক শিক্ষক ড. সাইফুল্লা চৌধুরী, সাবেক শিক্ষক ড. সুজিত কুমার দত্ত, সাবেক শিক্ষিকা ড. রেবেকা সুলতানা, সাবেক শিক্ষক সাব্বির চৌধুরী, সংগঠক আমিন মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এ পর্বের শেষ বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর ড. অমিত চাকমা। প্রাণবন্ত ও অর্থবহ এই বক্তব্য সবার গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করে।

এর পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—নবনির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ ফখরুদ্দীন সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান। সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আশীষ বড়ুয়া। এ ছাড়া ছিল সংগঠনের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের পরিচয় পর্ব। উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের ও প্রধান অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন যথাক্রমে সভাপতি বাহাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য, অর্থসম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল।

টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য
টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেকের একটি দৃশ্য

এরপর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আগামী ২০১৮-১৯ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। সবশেষে সভার সভাপতি এই পর্বের সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশেষ করে যাঁরা সংগঠনের নতুন আজীবন সদস্য হয়েছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।এ ছাড়া যাঁরা বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং আরও বিভিন্নভাবে আমাদের আর্থিক ও মানসিকভাবে সাহায্য–সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমা উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই পর্ব সঞ্চালনা করার জন্য সংগঠনের সহসভাপতি সব্যসাচী চক্রবর্তীকে অনুরোধ জানান। সঞ্চালক সব্যসাচী চক্রবর্তীর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় এ পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী সুমনা গাঙ্গুলি ও মুক্তা সরওয়ার। তাঁদের সুরের মূর্ছনায় অনুষ্ঠানস্থল উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।

টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেক ও পুনর্মিলনীতে উপস্থিতি
টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেক ও পুনর্মিলনীতে উপস্থিতি

বিজ্ঞাপন দিয়ে যাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তাঁরা হলেন আলমগীর হাকিম, মনজুর চৌধুরী, সনৎ বড়ুয়া, চিন্ময় দাশ, মণির ইসলাম, রতন দে, সরওয়ার জামান, শক্তি দেব, মুক্তা রায়, নাজমুল মুন্সী, শাহ আলম মোড়ল, ব্যারিস্টার পল্টু সিকদার, কানন বড়ুয়া, আমিন মিয়া, ফরিদউদ্দিন খান সিদ্দিকী, সাদাত সায়েম, মিঠু সোম, নূপুর কুমার রায়, সফিউদ্দিন আহমেদ, চিত্ত দাস, পারভেজ, নুর তৌহিদ, গৌতম পাল, বি. দত্ত, বাবা বিবেক সেন, রুহুল আমিন, গিয়াস উদ্দীন, মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার তোফাজ্জাল হক, সবুজ চৌধুরী, ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, রুবায়েত হাসান, জয়ন্ত কুমার সিনহা, শ্যামাদাস মুখার্জি, সোহেল মাসুদ, মুশতাক চৌধুরী ও মোহাম্মদ হ‌ুমায়ূন কবির। যেসব প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করে তারা হলো মেসার্স বাংলা বাজার, মেসার্স মারহাবা সুপার মার্কেট, মেসার্স চকবাজার, মেসার্স ভাসাভিস নাহিদ কালেকশন, মেসার্স আইস ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস ইনক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

পরিশেষে যাঁদের অক্লান্ত শ্রম, মেধা ও মননের ফসল এ রকম একটা পরিচ্ছন্ন, সফল অনুষ্ঠান, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন যথাক্রমে সমর পাল, আ ম ম তোহা, নাজমুল মুনশি, সুদান রায়, হ‌ুমায়ূন কবির, কামরুল আলম, নাসিমা বেগম, সারওয়ার জামান, স্বপন নাথ, অনুপ সেনগুপ্ত, শেখ জসিম উদ্দিন, বিশ্বজিৎ পাল, তেজিনা এমদাদ, কানিজ ফাতেমা, হাসান তারিক, খোরশেদ আলম খান, তানভীর, রফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, তানভী হক ও হাসান আল মামুন।

অনুষ্ঠান শেষে রসনা ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।