ইতালিতে বাংলাদেশিদের ঈদ বাজার

আরোয়ার মিয়ার মুদি দোকান
আরোয়ার মিয়ার মুদি দোকান

ইতালির রাজধানী রোমে বসবাস করেন অনেক বাংলাদেশি। দেশের মতো তাঁদের জীবনেও লেগেছে ঈদের ছোঁয়া। ঈদ বাজার নিয়ে কথা হলো কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে।

শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঘরিষার এলাকায় বাড়ি সাদ্দাম গাজির। দুই সন্তানের বাবা সাদ্দাম গাজির বয়স গেল মাসে ৩২ পেরিয়েছে। ইতালি এসেছেন চার বছর আগে। যান্ত্রিক নৌকায় লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি এসেছেন। সাগরে ডুবে মরার কথা জেনেও ঝুঁকি নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই, বেশি অর্থ রোজগার করে স্বজনদের সুখে রাখার পাশাপাশি ইউরোপের উন্নত জীবন। ইতালি এসে দেশটির সরকারের কাছে হিউম্যান রাইটস অ্যাসাইলাম সিকার হিসেবে থাকার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এরপর মেলে অস্থায়ী স্টে পারমিট। এ অনুমতি বাংলাদেশিদের কাছে কাগুজে সৌজন্য বলে পরিচিত। বসবাস করার এ কাগুজে অনুমতি পেলে যেকোনো অভিবাসী ইতালিতে কাজও করতে পারেন।

উল্লেখ্য, ইতালিতে অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি বা এখানকার ভাষায় পারমেচ্চ দ্য সৌজন্য ইলেকট্রনিকোর (Permesso di soggiorno elettronico) বিপরীতে কেউ কাগুজে সৌজন্য পেলে নিজ দেশে যেতে পারেন না। পাশাপাশি উকিল নিয়োগ করে আদালতে ইতালিতে থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হয়। সাদ্দাম গাজি রোম নগরীর পর্যটন এলাকায় একটি ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করেন সহকারী কুক হিসেবে। মাস শেষে পাওনা বেতনের অর্ধেক পাঠিয়ে দিতে হয় দেশে। দেশে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, মা আর উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের খরচের পুরোটাই নির্ভর তাঁর পাঠানো অর্থে। বেতনের বাকি অংশ দিয়ে চালাতে হয় নিজের থাকা-খাওয়া, আদালতের উকিল খরচ, মাসিক যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খরচ। সকাল ১০টায় কাজে ঢুকে বের হন সন্ধ্যা ছয়টার। আট ঘণ্টা কাজ শেষে বাসায় ফিরে গোসল ও বিশ্রাম সেরে ইফতার সারেন এলাকার বাংলাদেশি মসজিদে।

সাদ্দাম গাজি এবার ঈদে কী কিনবেন, তা জানতে চাওয়া হলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তরে বললেন, গরিব প্রবাসীর আবার ঈদ! দেশে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ঈদ বাজার আর রমজান মাসের অতিরিক্ত বাজার মিলিয়ে এপ্রিল মাস শেষ হওয়ার আগেই তিন মাসের বেতন পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তাঁকে ২৫০ ইউরো ধার করতে হয়েছে।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সাহাপুর এলাকায় বাড়ি জাহিদুল ইসলামের। পড়েন রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের তর ভেগাদা শাখায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে। তাঁর বাবা দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। বাবার আবেদনে জাহিদ এ দেশে এসেছেন মাস সাতেক আগে। ক্লাস শুরু হবে সেপ্টেম্বরে। তাই অলস সময়টুকু বাবার দোকানে টুকিটাকি কাজে সহায়তা করেন। ঈদে কী কিনবেন প্রশ্ন করলে জানালেন, সবকিছুই। জুতো, প্যান্ট, শার্ট সবই আছে জাহিদের ঈদ বাজারের তালিকায়।

স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ ১৮ বছর ধরে ইতালিতে আছেন সন্দীপের আনোয়ার মিয়া। নিজের মুদি দোকানের আয়ে সংসার চালান। ঈদে কী কিনবেন প্রশ্নের উত্তরে জানান, দেশে জন্ম নেওয়া তাঁর ২২ বছর বয়সী বড় ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করেন। তাঁর বড় ছেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিজের উপার্জিত অর্থেই কেনেন। এ দেশে জন্ম নেওয়া বাকি দুই মেয়েকে তাদের মা ঈদ উপলক্ষে প্রসাধন সামগ্রী আর পাথরের কানের দুল ও গলার গয়না কিনে দেবেন।