নতুন যুগের আমেরিকায় ভিন্ন মাত্রার ঈদ

ঈদের নামাজে
ঈদের নামাজে

একটা বাড়তি উত্তেজনার মধ্যে এবার আমেরিকায় ঈদুল আজহা উদযাপন করলাম। গত রোববার (১১ আগস্ট) ইসলামিক সেন্টার পিটসবার্গ, সংক্ষেপে আইসিপি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়লাম। টেক্সাস ও ওহাইও অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলার পর এবারের ঈদে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। নতুন যুগের আমেরিকার ঈদে ছিল তাই ভিন্ন মাত্রা।

আমেরিকা বহু বর্ণ, ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ। এখানে মুসলমানেরা বাস করছে যুগ যুগ ধরে। গড়ে উঠেছে অনেক মসজিদ ও মসজিদভিত্তিক সমাজ। আমি যখন প্রথম আসি তখন ভেবেছিলাম পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গ শহরে বোধ হয় খুব বেশি মসজিদ নেই। আস্তে আস্তে যত জানছি তত বুঝতে পারছি, আমেরিকায় মুসলমান সংস্কৃতি দিন দিন বাড়ছে।

আমেরিকায় যখন ঈদ উদযাপন করেছি তখন বাংলাদেশে রাত। দেশে সবাই যখন ঘুমে, তখন কোথাও একটা শূন্যতা নিয়ে ঈদের স্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ভাগ্যক্রমে দিনটি রোববার হওয়ার কারণে অফিস আদালত বন্ধ ছিল। আমরা যারা মুসলিম, তারা পুরো দিনটা মজা করতে পেরেছি। তবে সবার দৃষ্টিজুড়ে ছিল দেশের প্রতি আবেগ।

ঈদের নামাজ শেষে
ঈদের নামাজ শেষে

মানুষের যত প্রয়োজন বাড়ে মানুষ হয়তো তত আবেগহীন হয়ে পড়ে কিংবা আবেগ লুকাতে পছন্দ করে। আবেগ আসলে সাময়িক একটা ব্যাপার। আর বাস্তবতা হলো, বস্তুজগৎ ও প্রয়োজনের প্রতি মোহ। যার কারণে আমরা অহরহ আবেগ ত্যাগ করে সময়ের দাবি মেনে জীবনের কাছে ফিরি।

ছোটবেলার ঈদের মজা এখন পাই না। ছোটবেলার নতুন জামার সুখ খুঁজে পাই না বড়বেলার প্রাচুর্যে। তাই বলে আমরা ছোট হয়ে থাকতে চাই না। বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় রাতদিন সামনে হাঁটি। যৌক্তিক কারণেই তাই ঘরের বাইরে ঈদ করতে মনের আবেগকে পরাজিত করি অবলীলায়। মায়ের আদরের রান্না দেশে রেখে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে থেকেও তাই দুঃখ নেই তেমন। প্রতিনিয়ত চাহিদার কাছে আমাদের পরাজয় বরণ করতে তাই খারাপ লাগে না। ভালো থাকার অবিরাম প্রচেষ্টায় বৈরী পরিবেশেও আমরা আনন্দ পাই। আমেরিকায় প্রতি মুহূর্তে একটা চাপা ভয় কাজ করলেও আমরা আনন্দ খুঁজি ঈদ উৎসব কেন্দ্র করে।

ঈদের নামাজের আগে
ঈদের নামাজের আগে

বড়বেলার আনন্দের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। এখন সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার নাম আনন্দ। আবেগকে মাটি দিয়ে প্রিয় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নাম আনন্দ। আবেগ সংবরণ করে তাই আমরাও চলছি আমেরিকার পথে। অপরিচিত সমাজ করে নিচ্ছি আপন। এটাই বোধ হয় গতিশীল জীবনের অন্য রকম সুখ।