ঝরাপাতার ভালোবাসা-তিন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সামনে ব্যালকনি। তার ঠিক পরেই কনজারভেটরি। সেখানে একটি ডাইনিং টেবিল আছে। ডাইনিং টেবিলের মাঝখানে ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড। সঙ্গে ফ্লাওয়ার বেজ। এরপর বসার ঘর। এখানে টেলিভিশন আছে। ফায়ার প্লেস আছে মাঝখানে আর দুপাশে দুটি দুই আসনের সোফা পাতা।

বসার ঘরের পর ছোট রান্নাঘর। তার উল্টো দিকে থাকার ঘর। থাকার ঘর যেন পাঁচতারা হোটেল থেকে কোনো অংশে কম নয়। থাকার ঘরের সঙ্গে টয়লেট। বিরাট টয়লেট। টয়লেটের অর্ধেক গ্লাস দিয়ে সাজানো। অনেক বড় বাথটাব।

থাকার ঘরের দক্ষিণের জানালা খুলতে নিনিদের চোখে পড়ল আঁকাবাঁকা লেক। তার ওপাশে পাহাড়। পাহাড়ের মেঘগুলো যেন মাখামাখি করছে। তার ওপর ভর করেছে সকালের রোদের আলো। নিনিদ একটু আশ্চর্য হলো এক বেডরুমের এই কটেজে ঢুকে।


এই সাসপেন্সের জন্যই ইসাবেলা কোথায় থাকা হবে তা নিনিদের কাছে গোপন রেখেছিল পুরো পথ।

নিনিদের কখনো এভাবে একসঙ্গে এক বেডে কোনো নারীর সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা নেই। নিনিদ একদিকে রোমাঞ্চিত অন্যদিকে আজ মাকে মনে পড়ছে। মায়ের এত দিনের শিক্ষা কীভাবে উপেক্ষা করবে সে।

বাঙালির এই এক মায়া। পারিবারিক শিক্ষা সেই মায়ারই বন্ধন। মায়ের দৃষ্টিতে বিবাহবহির্ভূত সব ধরনের মেলামেশা খারাপ। অথচ জীবনের একপর্যায়ে এসে মায়ের শিক্ষাকে উপেক্ষা করতে যাচ্ছে।

নিনিদ যখন এসব ভাবছে, পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল ইসাবেলা। নিনিদ ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও পারল না। ইসাবেলার ভারী নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠল নিনিদের কাঁধ। ইসাবেলার নিশ্বাস একধরনের মোহগ্রস্ত করে তুলেছে তাকে। নিনিদ এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ইসাবেলার মুখোমুখি হয়ে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকে ইসাবেলার ঠোঁটে।

বাইরের রোদ আস্তে আস্তে কড়া হতে থাকে। নিনিদ হাতমুখ ধুয়ে বের হওয়ার তাগিদ দেয়। দুজন বের হয়ে সারা দিন ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরে আসে সন্ধ্যার একটু আগে। সন্ধ্যায় একটু শীত শীত লাগছে। এ দেশের আবহাওয়ার ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। গরম তো আবার ঠান্ডা।

রাতের গভীরতায় দুটি মন যেন একাত্মতা প্রকাশ করছে ভালোবাসার। নিনিদের সিগারেটের নেশা পেয়েছে। ইসাবেলাও সিগারেট টানতে চাইছে। নিনিদ ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করে দুজনে ব্যালকনিতে বসে টানতে থাকে। সিগারেটের ধোঁয়া রাতের আকাশে মিলিয়ে যেতে না যেতেই আবার কেউ একজন ধোঁয়া ছাড়ে। কত কথা, কত স্বপ্নের বীজ বোনে দুজনে। আকাশ পরিষ্কার। দক্ষিণের আকাশে তারা উঠেছে চারটি। দুটি তারা খুব কাছাকাছি। অন্য দুটি অনেক দূরে। ইসাবেলার তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলে। নিনিদ পূর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ইসাবেলার দিকে। মনে হচ্ছে কাছাকাছি দুটি তারার একটি নিনিদ অন্যটি ইসাবেলা।

রাতের গভীরতা শেষে ভোরের আলো ফুটে ওঠে। নিনিদ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। ইসাবেলা এখনো ঘুমিয়ে আছে।

১১.

দুদিনের হাওয়া বদল শেষে লন্ডনের পথে রওনা হয় দুজন। ইসাবেলা এ যাত্রায় সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন একজন। নিনিদের কাঁধে কাঁধ রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে। নিনিদও যেন ভিন্ন একজন। দুদিন আগেও ছোকরা বালক থেকে যেন পরিণত পুরুষ নিনিদ। নিনিদ ইসাবেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী। যাত্রার আট ঘণ্টা খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। বিকেল পাঁচটায় পৌঁছল ভিক্টোরিয়ার স্টেশনে। এবার তারা যে যার বাসায় যাবে। নিনিদ মনে মনে ঠিক করল, সে প্রথমে ইসাবেলাকে তার হোস্টেলে নামিয়ে দেবে। তারপর বাসায় ফিরবে।

নিনিদ ঠিক তাই করল। ইসাবেলাকে তার হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে তারপর ফিরল নিজ বাসায়। কিন্তু কী অদ্ভুত এক মায়া যেন সে ফেলে এসেছে ইসাবেলার কাছে। ওদিকে ক্লান্ত ইসাবেলা যেন ক্লান্তিতে নুয়ে পড়েছে। বিশ্রাম নিতে হবে তাকে। কোনো রকমে নিনিদকে বিদায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। নিনিদ নিজের বাসায় কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। সে যেদিকে তাকায় সেদিকে যেন ইসাবেলার ছবি ভেসে ওঠে।

নিনিদের মনে হয় মাকে ফোন দেওয়া হয়নি গত চার দিনে একবারও। এখন অনেক রাত। আজও ফোন করা হবে না। নিনিদ তার মোবাইল ফোনে তোলা ছবিগুলো দেখছে। কী সুন্দর। চোখ ঠোঁট বাঁকা করে ছবিগুলো তুলেছে ইসাবেলা। সেলফি কুইন বললে মনে হয় ভুল হবে না। কী সুন্দর সেলফি তুলেছে সে।

আস্তে আস্তে রাত বাড়ে। নিনিদের চোখে রাজ্যের ঘুম। টেবিল ল্যাম্প নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকারে চোখ বুজে আছে সে। এই মুহূর্তে দুদিন আগে ঘটে যাওয়া জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো যেন তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে মনে ভাবে ইশ এভাবে যদি সারা জীবনের জন্য ইসাবেলাকে পাওয়া যেত।

১২.

ক্লাস শুরু হতে না হতে এক মাসের কোর্স ব্রেক। এই ব্রেকে ইসাবেলা নিজের দেশে বেড়াতে যাবে। নিনিদ লন্ডনে থাকবে। ইসাবেলা দেশে ফেরার টিকিটও কেটেছে। দুই দিন পর ফ্লাইট। বিশ দিন পর ফেরার কথা। নিনিদ কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে। না যেতে পারছে দেশে, না যেতে পারছে ইসাবেলার সঙ্গে। বহু কষ্টে দুই দিন শেষ করে নিনিদ। ইসাবেলাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে নিনিদ যায় ইসাবেলার হোস্টেলে।

ইসাবেলা রেডি হয়ে বসে আছে। ছোট্ট একটি হাত লাগেজ নিয়েছে সে। দুজনে ছুটে চলেছে স্ট্যান্ড স্টেট এয়ারপোর্টের দিকে। বিকেল চারটায় ফ্লাইট। এখনো ঘণ্টা তিনেক বাকি। ইসাবেলার শরীর খারাপ করেছে সকালের দিকে। ভোরে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, সঙ্গে বমি হয়েছে। শরীর দুর্বল কিন্তু ঘণ্টা দুয়েকের পথে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিনিদ জিজ্ঞেস করে ওষুধ খেয়েছে কিনা। ইসাবেলা মাথা ঝুঁকিয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেয়। কথায় কথায় তারা দুজন এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়।

কফিশপে বসতে জায়গা খুঁজছে নিনিদ। এক কাপ কাপাচিনো আর এক কাপ লাটে অর্ডার করে ইসাবেলার কাছে ফিরে আসে নিনিদ। কফিশপ থেকে বড় স্ক্রিনে ফ্লাইট শিডিউল দেখা যায়। দেখা যায় মানে আপডেট পাওয়া যাচ্ছে। ইসাবেলার প্লেন অন টাইমে আছে। আরও দুই ঘণ্টা বাকি এখনো।

কফির টেবিলে তারা দুজন পাশাপাশি বসে আছে। কফিতে চুমুক দিতে না দিতে আবার বমি বমি ভাব হয় ইসাবেলার। সব কিছু কেমন যেন গন্ধ গন্ধ লাগছে ইসাবেলার। নিনিদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে টয়লেট কোন দিকে দেখার জন্য চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু ইসাবেলা ইশারায় তাকে পাশে বসতে বলে। কোনো সমস্যা নেই বলে ইসাবেলা জানাল সে আর কফি খাবে না। নিনিদ ইসাবেলার কাছে জানতে চাইল তার কি এসিডিটি প্রবলেম করছে। মাথা নেড়ে না–সূচক উত্তর দিল ইসাবেলা। কেমন যেন রোমাঞ্চিত ইসাবেলা। নিনিদকে বলল, কেন যেন মনে হচ্ছে আমি মা হব। আমার গত মাসে পিরিয়ডও হয়নি। তার সঙ্গে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব।

ইসাবেলার কথা শুনে নিনিদের গলা শুকিয়ে এল। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমতা-আমতা করে বলল তা কী করে সম্ভব?

লেখক
লেখক



ইসাবেলা উত্তর দেয়, কেন সম্ভব নয়? তুমি কি ভুলে গেছ, লেক ডিস্ট্রিক্টের সেই দুই রাতের কথা।

এবার নিনিদের কান গরম হয়ে ওঠে। কোনো রকম প্রস্তুতি না নিয়েই সেই দুই রাত কাটিয়েছে দুজন। দুই মাস পর যেন সেই ফল পেল সে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নিনিদ। এখানে এসব বেশ বেমানান না হলেও নিনিদের সমাজে তা বেশ বেমানান। তার ওপর মা জানলে কী মনে করবেন?

সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে। ইসাবেলা নিনিদকে বলল, প্রেগনেন্সি টেস্ট করে ফোনে জানাবে। তারপর বিদায় নেয় নিনিদের কাছ থেকে।

একটা সময় ইসাবেলা ভেতরে চলে যায়। কিন্তু নিনিদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এ কী হলো? মা কী মেনে নিবে আমাকে? কী করবে সে এখন।

১৩.

সকাল সকাল ইসাবেলার ফোন। নিনিদ ঘুমচোখে ফোন ধরে। ইসাবেলা বলে, শোনো বললাম না আমি মা হব। হঠাৎ যেন নিনিদের রাজ্যের সমস্ত ঘুম নিমেষেই চলে গেল।

কী বল, টেস্ট কি পজিটিভ?

হ্যাঁ, কেন? তুমি খুশি হওনি?

না, মানে।

নিনিদ আমতা-আমতা করতে লাগল। আর ফোনের ওপাশ থেকে ইসাবেলা আনন্দ-উচ্ছ্বাস করে যাচ্ছে। ইসাবেলা বলল, মা বলেছে আমার বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত লন্ডন যেতে দেবে না। পড়াশোনাও এক বছরের জন্য গ্যাপ দিতে বলেছে। তুমিও চলে আস না এক বছরের জন্য। নিনিদ কোনো কথা বলে না। চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একসময় কথা শেষ হয়।

লেক ডিস্ট্রিক্টের দুই রাতের আবেগ যেন তার সব স্বপ্ন কেড়ে নিল। প্রচণ্ড জেদ হচ্ছে নিজের ওপরে। এ বিষয়ে মাকে কোনো কিছুই বলা যাবে না। নিনিদ একা একা ভাবে কী করা যায়। অন্য দিকে মহাআনন্দে উচ্ছ্বাসে সময় কাটে ইসাবেলার।

ইদানীং নিনিদ যেন একটু বদলেছে। ইসাবেলা ফোন করলেও আগের মতো ফোন ধরে না। উল্টো ফোন কেটে দেয়। কথায় কথায় ঝগড়া করে নিনিদ। একটু একটু দূরত্ব বাড়তে থাকে দুজনের। এটাই চাচ্ছে নিনিদ। দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় যেন সম্পর্কই না থাকে।

সকাল-বিকেল কাজ আর ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে নিনিদ। ইসাবেলাকে সময় দেওয়ার মতো সময় নেই তার। অন্যদিকে ইসাবেলার সময়ের যেন অভাব নেই। সারা দিন তার সময় কাটে নিজের অনাগত সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে। ইসাবেলা অনাগত সন্তানকে তার বাবার পরিচয় জানায়। এ–ও জানায় যে বাবা ইদানীং পচা হয়ে গেছে। মাকে আর সময় দেয় না। আরও কত কথা।

কথায় কথায় নিনিদকে ফোন করে ইসাবেলা। নিনিদ ফোন কেটে দেয়। আবার ফোন করে আবার কেটে দেয়। অনেকবার চেষ্টা করার পর নিনিদ ফোন ধরে। ভীষণ রকম রাগ করে কথা বলে ইসাবেলাকে। ইসাবেলা হতভম্ব। এ যে অন্য এক নিনিদ। যে নিনিদকে তার কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে বেশ। অথচ প্রেমে পড়ার আগের ঠিক এমন এক পরিস্থিতির কথাই জানিয়েছিল তাকে। তখন নিনিদ সানন্দেই গ্রহণ করেছিল ইসাবেলাকে। কিন্তু এখন এমন করছে কেন? তাহলে কি আমার সন্তানসম্ভবা ওকে পরিবর্তন করে দিয়েছে?

ইসাবেলা নিজের মনের প্রশ্নগুলো নিনিদকে লিখে পাঠায়। নিনিদ যেন এই প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করছিল। সে সাফ সাফ জানিয়ে দিল। হ্যাঁ তাই।

ইসাবেলার এত দিনের বিশ্বাস আর নিনিদের প্রতি ভালোবাসা নিমেষেই উবে গেল। নিজের পেটে হাত দিয়ে অনাগত সন্তানকে সে অভয় দেয়। আর বলতে থাকে, এ ধরনের কাপুরুষ কখনো তোমার বাবা হতে পারে না। এখানেই শেষ।

ইসাবেলা ফোনের ফিরতি মেসেজে নিনিদকেও এটা জানিয়ে দেয়।

মেসেজ পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল নিনিদ। পৃথিবীর দুর্বল মানুষগুলো এ রকমই।

বিষণ্নতায় চারপাশ কেমন যেন মনে হতে থাকে ইসাবেলার। তবু সে ভালো থাকতে চায়। নিজ সন্তানের জন্য তাকে ভালো থাকতে হবে। সময়ও ঘনিয়ে আসে। আর পনেরো দিন পরেই পৃথিবীকে আলোকিত করতে আসবে তার সন্তান।

১৪.

২২ এপ্রিল সন্তান জন্ম দেয় ইসাবেলা। ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। সন্তান দেখতে অনেকটাই নিনিদের মতো। নাক থেকে ওপরের দিকে নিনিদ আর ঠোঁট থেকে চিক পর্যন্ত ইসাবেলার মতো। ইসাবেলা নাম রেখেছে এমাবেলা নিনি। নিনিদের ওপর রাগ থাকলেও মেয়ের নামে নিনিদের নামের একটি অংশ জুড়ে দিয়েছে আর নিজের নাম থেকে বেলা দিয়েছে। সব মিলিয়ে নাম রাখা হলো এমাবেলা নিনি। নিনিদের ওপর রেগে থাকলেও নিনিদকে মেসেজ পাঠিয়েছে সে। সঙ্গে মেয়ের দুটি ছবি।

কর্মব্যস্ত নিনিদের মোবাইল ফোনে মেয়ের ছবি আসে। নিনিদ মুহূর্তেই যেন কোথায় হারিয়ে যায়। এ যে নিজের প্রতিচ্ছবি। নিজের অস্তিত্বের উপলব্ধি। এত দিন নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অস্থির মানুষটি যে নিনিদ। একটু ছুঁয়ে দেখতে মন চাইছে এমাবেলাকে।

ফোনে ইসাবেলাকে চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। খুব সম্ভবত অভিমান করে আছে। অভিমান করা অতি স্বাভাবিক। এত দিন ইসাবেলার কেমন কেটেছে একটু খোঁজখবরও নেয়নি নিনিদ। অথচ মেয়ের ছবি পেয়ে ফোন করছে। নিনিদ আবার ফোন করে। ইসাবেলা ফোন ধরে না। নিনিদ যেন পাগলপ্রায়। কন্যার ডাক শুনতে ব্যাকুল।

নিনিদ ইসাবেলাকে মেসেজ করে। বারবার সরি বলে নিজের ভুল শোধরানোর জন্য সুযোগ চায়। নিশ্চয় এমাবেলা এখন আ–উ শুরু করেছে। সে তার বাবাকে খুঁজছে। প্লিজ প্লিজ ফোনটা ধরো একবার। এমনভাবেই মেসেজ পাঠায় নিনিদ।

মিনিট পাঁচেক পর ইসাবেলার ফোন। কিছুক্ষণ কেটেছে নিস্তব্ধ নীরবতায়। ইসাবেলা কোনো কথাই বলেনি। অন্যদিকে নিনিদ হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। তিন মিনিটের মাথায় অভিমান ভেঙে ইসাবেলা কথা বলে। নিজের মনের পুষে রাখা অভিমান যেন বিস্ফোরিত হতে থাকে। বেশ ধৈর্যশীল হয়ে শুনছে নিনিদ। বরফ গলা নদীর মতো ইসাবেলার অভিমান প্রবাহিত হতে থাকল। রাগ ঝেড়ে ফেলতে হয়। তা না হলে বিরাট আকারের মহামারিতে রূপ নেয়। নিনিদ তার নিজের সবকিছুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। আবারও ফিরে আসতে চাইছে ইসাবেলার জীবনে।

সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে ইসাবেলা বলতে লাগল সময়ই বলে দেবে কার কী অবস্থান। তারপর দুজনের ফোনালাপ গড়ায় এমাবেলাকে নিয়ে। মেয়ে সম্পর্কে নিনিদের নানান জিজ্ঞাসা নানান প্রশ্ন। ইসাবেলা একে একে উত্তর দেয়।

এত দিন যোগাযোগহীন নিনিদ আরও আরও মেয়ের ছবি পাঠাতে বলে ইসাবেলাকে।

নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিণতি। নিনিদ এত দিন ইসাবেলাকে নিজেই এড়িয়ে চলেছে। অথচ আজ? নিজে পথে পথে মানুষ হয়ে নিজের মেয়েকে যেন সেই রকম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছিল। অথচ ইসাবেলা যদি মেয়ের ছবি না পাঠাত তাহলে কি আজ নিনিদের ভেতরে এই ধরনের পরিবর্তন আসত। আসত না।

মোহগ্রস্ত পৃথিবীতে আসলে মানুষ কী চায় সে নিজেও বোঝে না। যখন বোঝে তখন তার সময় থাকে না ফিরে আসার। (শেষ)

লেখকের ই–মেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ রচনার আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন