বিজয়ের গানে উদ্ভাসিত নতুন বাংলাদেশ

প্রথম আলোর ফাইল ছবি
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

স্বাধীনতার পরে জন্মের কারণে পরাধীনতার মানে কোনো দিন বুঝিনি। দেখিনি বেদনাবিধুর আকাশে কেমন যন্ত্রণার মেঘ জমেছিল পাকিস্তানিদের পৈশাচিক হামলায়। তবে বুঝেছি আমাদের ভাইবোনের রক্ত আর ইজ্জতে এসেছে স্বাধীনতার জয়। জেনেছি নতুন শপথে উঠেছে লাল সূর্য।

আজ যখন মুক্ত গলায় অবাধে বলে যাই, বুঝতে পারি মা, মাটি আর বাতাসের আপন গন্ধ। জানালার ফাঁকে নরম বাতাসে যখন বিজয়ের পতাকা ওড়ে, তখন খুঁজি আমার আমির গান। বিশ্ব মানচিত্রে এই পতাকা জায়গা করার বদৌলতেই যে এই আমি, আমার ঠিকানা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো সুখে ভাসি আপন ঠিকানায়। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে একটি পতাকার আলোতেই যে আমার আনন্দ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার ফলে বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের কক্ষপথ থেকে নির্বাসিত হয়েছে বহু বছর। স্বাধীনতাবিরোধীরা সমাজে হয়েছে প্রতিষ্ঠিত। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেখান থেকে চলে গিয়েছিল বহুদূরে। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলা পেয়েছে মুক্তির এক ভিন্ন স্বাদ। রূপান্তর ঘটেছে অন্য এক বাংলাদেশের, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির মাধ্যমে নাগরিক অধিকার রক্ষার শপথ নিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিজয়ের সুর বেজেছিল অন্য রকম মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। সেখানে আমরা এখনো পৌঁছাতে পেরেছি কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন। সামাজিক–অর্থনৈতিক মুক্তি আর গণতন্ত্রের চর্চায় আমাদের এখনো করতে হবে অনেক কিছু।

আমাদের জনগণের নাগরিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। ক্ষুধা, স্বাস্থ্য আর আবাসন সমস্যা আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পারিনি। আমাদের শিশুদের এখনো ডাস্টবিনের ময়লা কুড়িয়ে জীবন বাঁচাতে হয়। আমরা এখনো সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারিনি এখনো। আমাদের ধনী হয়েছে আরও ধনী, আর গরিব যাচ্ছে আস্তাকুঁড়ে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার স্লোগান তাই হোঁচট খায় যৌক্তিক নানা প্রশ্নে।

যতই প্রশ্ন থাকুক, আমরা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। বিশ্বে নানা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ভালো করছে। আমাদের গার্মেন্টস বিশ্ব বাজারে সমাদৃত। ক্রিকেটে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ যদিও ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলার মান ক্রমেই নিচে নেমেছে। আমাদের মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে বিশ্ববাজারে। আমাদের তরুণদের জয়গানে আলোকিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ নিয়ে আমরা তরুণেরা অনেক আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের বাংলাদেশ সত্যি সত্যি একদিন সোনার বাংলা হবে। নতুন প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে। স্বপ্ন তাই বাংলার বুকে। আর খুব দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ চলে আসবে সামনের কাতারে। সগৌরবে উচ্চারিত হবে বাংলা মায়ের নাম।

ড. মো. ফজলুল করিম, পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ।