স্পেনে স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা, ১০ দিনের শোক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে ১০ দিনের বিশেষ শোক ঘোষণা করেছে স্পেন সরকার। ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে ১০ দিনের বিশেষ শোক ঘোষণা করেছে স্পেন সরকার। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে স্পেন। দেশটিতে সর্বশেষ গতকাল বুধবার (২৭ মে) করোনায় মৃতের সংখ্যা কেবল একজন।

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতে থাকায় স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা। আগামী ৭ জুন থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। খুলবে বিমানবন্দর। চালু হচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সেই সঙ্গে পর্যটনের হাল ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু করেছে স্পেন সরকার। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে ১০ দিনের বিশেষ শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বুধবার (২৭ মে) থেকে শুরু হয়ে আগামী ১০ দিন অর্থাৎ ৫ জুন পর্যন্ত জাতীয় শোক পালন করা হবে। গত মঙ্গলবার দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সরকারের মুখপাত্র মারিয়া জেসুস।

গত দুই সপ্তাহ ধরে স্পেনে করোনা পরিস্থিতিতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগেও এই বৈশ্বিক মহামারির কারণে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ইউরোপের শিল্পোন্নত এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশটি। এ ভাইরাসের নির্মমতার কবলে শিকার হয়ে মারা যান দেশটির প্রায় ২৮ হাজার মানুষ। বিশ্বে যে কয়টি দেশ করোনার ভয়াবহ তাণ্ডবের করুণতম দৃশ্য দেখেছিল স্পেন ছিল সেই তালিকার প্রথম সারিতে। দেশটির চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, খেলাধুলাসহ অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কোন সেক্টর বাদ যায়নি, দেশটির প্রতি ইঞ্চি মাটি এক অদৃশ্য যুদ্ধ ময়দানে পরিনত হয়েছিল।

দুই মাস করোনাভাইরাস তাণ্ডবের মুখে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন অসংখ্য মানুষ, সর্বোচ্চ সঁপে দিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন তাদের একটা বড় অংশ। আর তাই দেশটিতে করোনার সঙ্গে লড়াই করে পরপারে চলে যাওয়া মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সরকার ১০ দিনের শোক দিবস ও বিশেষ কার্যক্রমের আয়োজন করেছে বলে জানান মারিয়া জেসুস। তিনি বলেন, এই সময়ে দেশের সরকারি সকল ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। নৌবাহিনীর জাহাজেও পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

স্পেনের জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
স্পেনের জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ১১৮ জন। আক্রান্ত ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৯ জন।

করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমে আসায় দেশটিতে লকডাউনে শিথিলতা আনা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খুলে দেওয়া হয়েছে কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেক্টর এবং গণপরিবহন। জুনের প্রথম সাপ্তাহের শেষের দিকে লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রস্তাবনা ইতিমধ্যে দেশটির সংসদে দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো ঘোষণা না আসলে ৭ জুন দেশটির জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে। তবে বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে।

স্পেনে গতকাল বুধবার (২৭ মে) করোনায় মৃতের সংখ্যা কেবল একজন। ছবি: সংগৃহীত
স্পেনে গতকাল বুধবার (২৭ মে) করোনায় মৃতের সংখ্যা কেবল একজন। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দুটি দেশ স্পেন ও ইটালির জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ৭ লাখ ৫০ হাজার মিলিয়ন (৭৫ হাজার কোটি) ইউরোর আর্থিক সহযোগিতা ঘোষণা করেছে। করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ইইউ এই ঘোষণা দিল। স্পেনের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ৪০ হাজার মিলিয়ন (১৪ হাজার কোটি) ইউরো। যা ভবিষ্যতে ইইউকে পরিশোধ করতে হবে না। শুধু কোন কোন খাতে খরচ করেছে, সেই হিসেব দিতে হবে। করোনা মহামারিতে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালির পরে স্পেনের জন্যই সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ করেছে ইইউ।