ইইউ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একসঙ্গে স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

বর্তমান মহামারি ইউরোপের প্রথমে যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে সেটি হচ্ছে ইতালি। এই ভাইরাস সম্পর্কে অনভিজ্ঞতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিতে অনিয়ন্ত্রিত জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ফলে মার্চ মাসে শুরু হওয়া সংক্রমণ এপ্রিলে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে। স্পেন ও পর্তুগালের চিত্রও একই। মার্চে শুরু হওয়া প্রকোপ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে।
১৭ ও ১৮ জুলাই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মিটিংয়ের প্রস্তুতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা ইতালি ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক ইউরোপীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম জরুরিভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং ঐকমত্যে পৌঁছান দেশ তিনটির সর্বোচ্চ নেতারা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিসেপি কন্টে বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নয়, পুরো ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রয়োজন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখানে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ জয়ী হতে পারবে না এবং হারবে না। আমরা সবাই মিলে জিতব এবং হারব।’
ইউরোপের গ্রীষ্মকালীন অর্থনৈতিক পূর্বাভাস যা উল্লেখ করা হয়েছে, সে কথা স্মরণ করে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা বলেন, ‘ইউরোজোন এবং সামগ্রিকভাবে ইউরোপের অর্থনীতি কঠিন সংকটের মুখোমুখি হবে। যার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামটি অনুমোদনে আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। সুতরাং এটি অপরিহার্য যে ১৭-১৮ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলে আমরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে একটি চুক্তিতে যেন পৌঁছাতে পারি। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবটি বহুজাতিক আর্থিক কাঠামো আলোচনার অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি সাধারণ এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়া।
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, জুলাই মাস একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর মাস। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বলছিলেন, ঐক্য অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনো চাকরি বাঁচাতে পারে এবং ইউরোপিয়ান প্রকল্পগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমি জানি যে আলোচনাটি কঠিন হবে। তবে জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের পুনরুদ্ধার কর্মসূচি এবং বহুজাতিক কাঠামো–সম্পর্কিত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে।’
পেদ্রো সানচেজ আরও বলেন, পুনরুদ্ধার তহবিলের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশন যে পরিমাণ প্রস্তাব দিয়েছে, কমপক্ষে সে পরিমাণ হতে হবে এবং তহবিলগুলোর অনেকটি অবশ্যই স্থানান্তরের জন্য হতে হবে এবং ঋণের জন্য নয়।
ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও ঐতিহ্যের দিক থেকে পর্তুগাল স্পেন ও ইতালি খুবই কাছাকাছি অবস্থান করে, আঠারো শতকের পর থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গঠন হওয়ার আগেও তাদের মধ্যে একটি সার্বিক অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যগত সুসম্পর্ক বজায় ছিল। সংগত কারণেই গত সপ্তাহে মহামারির কারণে বন্ধ হওয়া বর্ডার পুনরায় চালু করার সময় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ পর্তুগিজ জনগণকে ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
তিন দেশের শীর্ষ নেতারাই আশা করছেন, ১৭ ও ১৮ জুলাই ইউরোপিয়ান কাউন্সিল মহামারির প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি যৌক্তিক সামঞ্জস্যপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন, যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব দেশ মহামারিতে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।

*সমাজকর্মী ও লেখক