বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট থাকুক আজীবন

১.

জীবন চলার পথে প্রত্যেকের জীবনে বন্ধু নামের বিশ্বাসী ও মজবুত একটি সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে যায়। যে সম্পর্ক কখনো লাভ অথবা ক্ষতির ভাবনায় গড়ে ওঠে না। কিছু মুহূর্ত আমাদের সামনে হাজির হয়ে যায়, যেখানে বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। যার কাছে মনের সব লুকানো কথা আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে খুলে বলা যায়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে টেনে তোলা হয় বিপৎসীমা থেকে নিরাপদ স্থানে। ভুল সিদ্ধান্তের অন্ধকার হতে ফিরিয়ে আলোকিত পথের সন্ধান দেখায়। সেই বিশ্বাসী সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বন্ধুত্বের আসনে বসিয়ে তাকে বন্ধু বলা যায়। বন্ধু হতে পারে এক থেকে একাধিক। আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হলো বন্ধু।

বন্ধু হতে পারে যে কেউ। বন্ধুত্বের কোনো বয়স নেই। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সততা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সমবেদনা, মনের অনুভূতি প্রকাশ, ভয়কে জয় করায় নির্ভরশীল সঙ্গী হলো বন্ধু। কখনো কখনো পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, অপরিচিত কেউ সামনে এসে দাঁড়ায় বন্ধুর ভূমিকায়। যৌথ উদ্যোগে হাত বাড়ায় শক্ত একটি ভিত্তি গড়ার আশায়। বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল সৎ ও মননশীল চিন্তার ওপর। যার বন্ধু আছে সে কখনো গরিব নয়। কথাটির বিপরীতে যুক্তি দাঁড় করানো বিন্দু সুযোগ নেয়।

জীবন চলার পথে দুই প্রকার বন্ধু সামনে এসে দাঁড়ায়। সৎ বন্ধু ও অসৎ বন্ধু। সাদা মনের সৎ বন্ধু কখনো নিজ স্বার্থের ঝুলির দিকে তাকায় না। অসৎ ও বিকৃত মনের বন্ধু বুকে বুক মেলায় ঠিকই। কিন্তু তার এক হাত পিঠের ওপর রাখলে অন্য হাতে থাকে সুবিধাভোগী অস্ত্র। তার বিশ্বাসঘাতক বন্ধুত্বের অস্ত্র যেকোনো ভালো মনের চিন্তার দীর্ঘ পথ সীমিত করে থামিয়ে দেয়। অনেক সময় পরস্পরের প্রতি ভুল–বোঝাবুঝিতে অটুট বন্ধুত্বে ফাটল ধরার দুঃসময় সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে সমসাময়িক খোলামেলা আলোচনা সাপেক্ষে বন্ধুত্বের সুন্দর সম্পর্কে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়।

দুই.
ভাগ্য যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে, তখন সেখানে বসবাস করতে করতে পরিচয় হয় কিছু মানুষের সঙ্গে। তেমনই কয়েকজন মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আমার বন্ধুত্ব নামের মজবুত ভিত্তি। একে অপরের কাছে সুখ-দুঃখের গল্পের ঝুলি খুলে দিই। আবার মুঠোফোনের মাধ্যমেও কুশল বিনিময় হয়। হাসিঠাট্টা হয়। ভালো বন্ধুরা কোনো দিন আরেকজন বন্ধুর সঙ্গে স্বার্থপরের মতো আচরণ করে না। সে কারণে ভালো লাগায় ও ভালোবাসায় ঠিকে থাকে এই মধুর সম্পর্ক। বন্ধুর কাছে সারা জীবন বন্ধুত্বের বন্ধনে অটুট হয়ে থাকা শান্তনার।

এরিস্টটল বলেছেন, ‘প্রতিটি নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরোনো হয়, ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়।’ আবার এমিলি ডিকেনসন বলেছেন, ‘আমার বন্ধুরা আমার সাম্রাজ্য।’ তবে আমার কাছে আমার বন্ধুরা হলো হাত আর চোখের মতো। হাত যখন ব্যথা পায়, চোখ দিয়ে তখন জল ঝরে পড়ে। আবার চোখ দিয়ে যখন জল ঝরে পড়ে, তখন সেই ব্যথায় ব্যথাতুর হাতটি চোখের জল মোছার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং ব্যথা আর চোখের জলের সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ, আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনও একই সুতায়। একে অপরের কাছে থেকে দূরে থাকলেও অন্তরে টান থাকে ষোল আনা। করোনাকালীন (মো. শরীফ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর খান, ওমর ফারুকী, রিপন চৌধুরী, শাহ মিনহাজ)–সহ আরও অনেকে আমরা এখন আলাদা।

আমি দেখেছি বন্ধুত্বের হাসিমাখা মুখ। তারা খুব আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। সময়–সুযোগমতো সবাই একসঙ্গে আড্ডা দেয়। হাসি–ঠাট্টায় সবাই জমিয়ে রাখে আড্ডার আসর। গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে জীবন চলার পথের অভিজ্ঞাতা আদান–প্রদান করা হয়। আবার কখনো কখনো সমসাময়িক জীবন নিয়ে আগামীর ভাবনাগুলো জানতে চাওয়া হয়। দীর্ঘ আড্ডায় হাসি–ঠাট্টার পাঠচক্রের ইতি টেনে ফিরে যাই যার যার ঠিকানায়। সব বাঁধাবিপত্তি পার হয়ে বন্ধু নামের একই ছাতার নিচেই আমরা ফিরে আসি বারবার। এই জীবন চলার পথে কেউ আমরা দীর্ঘস্থায়ী নই। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা দূরের বাসিন্দা হয়ে যাব একদিন। দূর সীমানার বাইরে চলে গেলেও অন্তরে অটুট থেকে যায় যেন আন্তরিক টান। সুখে-দুঃখে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে পাশে থাকুক বিশ্বস্ত হয়ে বন্ধুত্বের হাত। অনন্তকাল ভালোবাসার বন্ধনে মজবুত হয়ে থাকুক আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন।