মানস চোখে বাংলাদেশ

নিউইয়র্কের একটি সড়ক
নিউইয়র্কের একটি সড়ক

সপ্তাহ শেষে ছুটির সকালগুলোতে ছেলেকে নিয়ে কোচিংয়ে ছুটতে হয়। তুষারপাত কিংবা অঝোর বৃষ্টির দিনে গাড় নিই না। বাড়ির পাশেই বাসস্টপ। টুপ করে উঠে পড়ি। ছেলেকে নামিয়ে দিয়েই ফিরতি বাসে উঠে বসি। নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যায় বাস। ছুটির সকাল, তাই যাত্রী কম। কখনো তিন-চারজন। কখনো আমি একা। কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে বাইরের দৃশ্য দেখি। কখনো তুষারপাত, কখনো অবিরত ঝরে পড়া বৃষ্টি। একমাত্র যাত্রী নিয়ে বিশালাকৃতির বাসটি ছুটে চলে হাইওয়ে ধরে। পথে কখনো দুই চারজন ওঠে। শীতে হিটার, গরমে এসি—এত সুবিধা বাসগুলোয়! তবুও মন পড়ে রয় দেশে। মানস চোখে ভেসে ওঠে, কত দিন টেকনিক্যালের মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি সকালের ক্লাস ধরব বলে। কিন্তু লোকজনে ঠাসা বাসগুলোতে ওঠার সাহস হয়নি। কেবলই মনে হতো, পরের বাসে নিশ্চয়ই ঠাঁই হবে। অসহায় দৃষ্টিতে পর পর কয়েকটি বাস চলে যেতে দেখি। কেউ কেউ নারী যাত্রী নিতে চায় না। বলে সিট খালি নেই। শেষে নিরুপায় হয়ে কোনো একটিতে ঠেলাঠেলি করে উঠতাম।

লেখিকা
লেখিকা


দৃশ্যপট বদলায়। মানস চোখে ভেসে ওঠে, শ্রদ্ধা আর সম্মানের একটি মুখ। আমার বিয়ের অ্যালবামে যার হাস্যোজ্জ্বল, গল্পে মশগুল অনেক ছবি। সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী। তিনি বাস থেকে নামছিলেন। কিন্তু পারেননি। তার আগেই বাস চলতে শুরু করে৷ মুখ থুবড়ে পড়ে যান তিনি। প্রতিদিনের ব্যস্ত মানুষটি চলে যান সব চাওয়া-পাওয়ার বাইরে, ব্যস্ততাবিহীন এক জগতে। রাস্তায় পড়ে থাকে তাঁর নিথর দেহখানি।
কত সীমাবদ্ধতা নিয়ে টিকে আছে আমার জনবহুল জন্মভূমি! তার মাঝেই আবার কেউ কেউ ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে। কিছু ভালো মানুষের চেষ্টায় কিছুদূর এগিয়ে যায় দেশটা। আবার কিছু খারাপ মানুষের কারণে পিছিয়ে যায় বহুদূর, অনেক দূর। কেমন করে উন্নতি হবে এই অভাগা দেশের! অজান্তেই বুকের গহিন থেকে করুণ সুর হয়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। ততক্ষণে লাউড স্পিকারে বাস চালকের ঘোষণা মনে করিয়ে দেয়, আমার যে নামার সময় হলো। দেশ ছেড়ে দূরে আছে যারা, প্রতিনিয়ত এমন করে তারা দেশকে বুকে ধারণ করে চলে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়...৷