দূরত্ব যতই হোক হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ

আইফেল টাওয়ারের সামনে লেখক ও তার বন্ধুরা
আইফেল টাওয়ারের সামনে লেখক ও তার বন্ধুরা

দূর পরবাসে প্রায় বিশটিরও অধিক ঈদ কেটে গেল। প্রবাস জীবনের ঈদ বর্ণহীন। এদিন স্বদেশে ফেরার আকুতি থাকে আমার হৃদয়ে। আর অতীত ঈদের স্মৃতিচারণ করে কাটে আমার ঈদ আনন্দ। তবে এবার ঈদটা কেটেছে একটু ভিন্ন আমেজে। ঈদের আগের রাতে (আমাদের এখানে ঈদ হয়েছে ১৭ জুলাই শুক্রবার) ফেসবুক খুলে দেখি বন্ধু সোহেল মিয়ার অফ লাইন মেসেজ, দোস্ত আমরা এখন প্যারিসে। হিল্টন হোটেলে উঠেছি। তোমার মোবাইল নম্বরটা দাও। তাকে নম্বর পাঠালাম। পরদিন সাত সকালে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য স্থানীয় ওভারভিলিয়ে বাঙালি মসজিদে গেলাম। নামাজ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সোহেলের ফোন। ঈদ জামাতের মধ্যে কথা বলার সুযোগ নেই, তাই নামাজের পর কল দিচ্ছি বলে তখনকার মতো রেখে দিলাম।

টাওয়ারের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা
টাওয়ারের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা


নামাজ শেষে আবার কল দিলাম। আলাপচারিতায় জানতে পারলাম, তারা মোট নয়জনের একটা দল দুটি গাড়ি নিয়ে প্রায় এক হাজার দুই শ কিলোমিটার ড্রাইভ করে ডেনমার্ক থেকে ফ্রান্সে ঘুরতে এসেছে। আজ তারা ডিজনিল্যান্ড দেখতে যাবে। কাল শনিবার সকাল ১১টায় ওরা আসবে ভুবন ভুলানো প্যারিস তথা ফ্রান্সের আইকন আইফেল টাওয়ার দেখার জন্য। বন্ধু আমাকে ওই সময় আইফেল টাওয়ারের সামনে থাকতে অনুরোধ করল। আমি সম্মতি দিলাম তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। দীর্ঘ সাত বছর পর বন্ধুর সঙ্গে আবার দেখা হবে। ভাবলাম এবার জমবে মেলা আইফেল টাওয়ারে।
প্ল্যানমাফিক পরদিন আইফেল টাওয়ারে তাদের সঙ্গে মিলিত হলাম। সোহেল ছাড়া আরও দেখা হলো ডেনমার্কপ্রবাসী আলম ভাই-ভাবি, তাদের দুই ছেলে, জিয়া ভাই-রুমা ভাবি ও আমির ভাই-নিঝুম ভাবির সঙ্গে।

লেখক
লেখক

প্যারিসের প্রধান শোভা আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৯ সালে মি. গুসটাভ আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করেন। পুরো টাওয়ারটা তৈরি করতে লোহা বা স্টিলের মোট মেটাল পার্টস বা যন্ত্রাংশ ছিল ১৮ হাজার ৩৮টি। আইফেল টাওয়ারটি চারটি বিশাল লোহার পিলারের ওপর দাঁড়ানো। প্রায় ২৫০ জন নির্মাণকর্মী বা শ্রমিক দুই বছর পাঁচ মাস ধরে বিরামহীনভাবে নির্মাণকাজ শেষ করতে পেরেছিলেন। রাতে আইফেল টাওয়ারে কয়েক লাখ রঙিন বাতি বারবার তার রং বদলায়। পুরো টাওয়ারের গায়ে লাখ লাখ বাতি জ্বলে। এ দৃশ্য রাতেরবেলায় দেখতে কী যে অপূর্ব লাগে তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো বড়ই দুষ্কর। দূর থেকে আইফেল টাওয়ার দেখতে খুব সরু মনে হলেও আসলে কিন্তু তা অনেক প্রশস্ত ও বিশাল। একই সঙ্গে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার দর্শনার্থী আইফেল টাওয়ারে উঠতে পারেন। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা এক হাজার ৮১ ফুট ৭ ইঞ্চি। এর ওজন ১০ হাজার এক শ মেট্রিক টন। ভ্রমণ বা দেখার জন্য সিঁড়ি বা বা লিফটের সাহায্যে টাওয়ারটির শীর্ষস্থানে ওঠা যায়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে আমরা আইফেল টাওয়ারের চূড়ায় আরোহণ করলাম। সেখান থেকে প্যারিস নগরীর সৌন্দর্য চমৎকারভাবে উপভোগ করলাম। আইফেল টাওয়ারের চূড়া থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত শহরটি দেখা যায়।
অনেকের কাছে শুনেছিলাম আইফেল টাওয়ারের শীর্ষ চূড়ায় নাকি অন্যান্য দেশের পতাকার সঙ্গে আমাদের লাল সবুজ পতাকাটিও রাখা আছে। এর আগে সেটা আমার দেখা হয়নি। তাই প্রিয় দেশের পতাকাটি দেখার জন্য আমরা এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে চোখে পড়ল বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা সঙ্গে লেখা, ঢাকা, বাংলাদেশ, দূরত্ব ৭৯২৭ কিলোমিটার। আইফেল টাওয়ারের চূড়ায় খুঁজে পেলাম প্রিয় বাংলাদেশ। দূরত্ব যতই থাকুক না, হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ, ভালো থেকো প্রিয় বাংলাদেশ।