বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ

নবীনবরণে শিক্ষার্থীরা
নবীনবরণে শিক্ষার্থীরা

সার্কভুক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হয় সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বর্তমানে এখানে সাতটি বিভাগে মাস্টার্স ও এমফিল-পিএইচডি করানো হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ও বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে বর্তমানে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে মোট ৭০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে ৩০ জন শিক্ষার্থী ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স করতে ও পাঁচজন এমফিল-পিএইচডি কোর্স করতে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। এই সংখ্যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। প্রতিবছরের মতো এবারও আগস্টে নতুন সেশনের শুরুতেই আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন এই শিক্ষার্থীদের

নবীনবরণে শিক্ষার্থীরা
নবীনবরণে শিক্ষার্থীরা

জন্য একটি নবীনবরণ অনুষ্ঠানের। গত ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুনদের জন্য বরণডালা সাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপেই ফুল, মিষ্টি ও শরবত দিয়ে বরণ করা হয় নবীনদের। দ্বিতীয় বর্ষ সমাজবিজ্ঞানের আসিফ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শ্রীমন্তীর উপস্থাপনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমেই দ্বিতীয় বর্ষের সৌরভ একটি মনমাতানো লালনগীতি পরিবেশন করেন। প্রথম বর্ষের নাইম পরবর্তীতে তার অসাধারণ গানে মাতিয়ে দেন উপস্থিতিকে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের নিশু ও এলএলএমের আরিফ। নবীনদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্য দেন সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক সৈয়দ আহসান আহমেদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের পিএইচডিতে অধ্যয়নরত রানা। তারা এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোকপাত করেন।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা
প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা

দ্বিতীয় ধাপে নবীনদের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন দ্বিতীয় বর্ষ এলএলএমের আতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের রুবিনা। এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী প্রথম বর্ষের ইরাকে মিস বাংলাদেশ ও মুসাকে মি. বাংলাদেশ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার সমাপ্তি ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয়কারী কম্পিউটার বিজ্ঞানের পিএইচডিতে অধ্যয়নরত আশরাফ।
এরপর সবার জন্য পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু দেশীয় ধাঁচের খাবার। দেশীয় আঙ্গিকে খিচুড়ি, মাছ ভাজি, মুরগি ভুনা, বেগুন ভাজি, দই-মিষ্টি ও কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় নবীন তথা সকল উপস্থিতিকে। দেশ থেকে হাজারো মাইল দূরে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে স্বদেশি খাবারের স্বাদ অভিভূত করে প্রথম বর্ষের তমাল, আসাদ, রনবির, ইভা ও অন্য সবাইকে। পিএইচডি আইন বিভাগে অধ্যয়নরত আল আমিনের তত্ত্বাবধানে নবীনদের শুভেচ্ছা উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আড্ডার।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা

এই একটি ছোট্ট আয়োজন সম্মিলিত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, বিভিন্ন সমাজ থেকে উঠে আসা ৭০ জন বাংলাদেশিকে। যা গড়ে তোলে একটা পরিবার। এ ধরনের আয়োজন মনে করিয়ে দেয় বিদেশের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশের অস্তিত্ব। এ সব ছোট আয়োজন সুযোগ করে দেয় পড়াশোনার চাপে ব্যস্ত শিক্ষার্থীদের একটু আনন্দোৎসব করার। এই বাংলাদেশি পরিবারের সদস্যরা ভিনদেশের অপরিচিত মাটিকে পরিচিত ও আপন করে নেওয়ার জন্য পাথেয় হয়ে ওঠে এক অপরের। আমরা সবাই এখানে এক দেশের সন্তান। পরবাসে এটা আমাদের অনেক অভাব দূর করতে সহায়তা করে। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নবীন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠে এক অনন্য পরিবার।

(লেখক এমফিল/পিএইচডি প্রথম বর্ষ, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। ইমেইল: [email protected])