দেশ ছেড়ে এলেই বোঝা যায় দেশের মর্ম

নন্দী হিল
নন্দী হিল

ঢাকা থেকে বেঙ্গালুরুর দূরত্ব দুই হাজার এক শ ৮৮ কিলোমিটার। বেঙ্গালুরু ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী। এখানে আসার আগে খুব একটা সময় পাইনি দেশের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার। তাই মনটা একটু খারাপই ছিল বলা যায়। আর মনে একটা অজানা শঙ্কা তো থেকেই যায়, নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ। শেষমেশ সবকিছু ছেড়ে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে আমরা চারজন (গগন চাকমা, নাহিদ আলম, পম্পু চাকমা ও আমি) রওনা দিই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। আমরা সবাই সবার পরিচিত। তাই যাত্রাপথের ভয়টা ততক্ষণে অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।

নন্দী হিলের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে লেখক ও তার সহপাঠীরা
নন্দী হিলের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে লেখক ও তার সহপাঠীরা


অবশেষে আমরা সকলে বেঙ্গালুরু পৌঁছে যাই ১ জুলাই, ২০১৫। তারপর ট্যাক্সি করে রওনা দিই বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন অফিসের উদ্দেশে। কমিউনিকেশনে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। কারণ এখানে মানুষগুলো আমাদের বাংলাদেশের মানুষদের মতোই অনেকটা অতিথিপরায়ণ। এরপর একাডেমিক সব কাজকর্ম শেষ করে শুরু হয়ে যায় সেই পড়াশোনা বিষয়ক ব্যস্ত জীবন। দেশে ফেলে আসা পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের কথা সব সময় মনে পড়ে। কিন্তু এখানকার পরিবেশ এ এই ব্যাপারটা ধীরে ধীরে অনেকটাই আয়ত্তেও মধ্যে চলে আসে।
মাস খানেক কেটে যাওয়ার পর শুনলাম এখানে অনেক সুন্দর একটা জায়গা আছে, নাম নন্দী হিল। বেঙ্গালুরু সিটি থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে।

নন্দী হিলের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে লেখক ও তার সহপাঠীরা
নন্দী হিলের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে লেখক ও তার সহপাঠীরা

ইন্টারনেটে সার্চ করে প্রথমে ছবি দেখলাম। প্রথম দেখাতেই বলা যায় অনেকটা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথমেই বানিয়ে নেই একটি আমার বাংলাদেশের পতাকা। দরজিকে পতাকার ছবি দেখিয়ে ভালোমতো বানাতে বললাম। দরজিও ব্যাপারটা অনেকটা গুরুত্বের সঙ্গেই নিল। তারপর বেরিয়ে পড়লাম টুরিস্ট গাড়ি ভাড়া করার জন্য। সবকিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে আমরা গত ৯ আগস্ট রওনা দিই নন্দী হিলের উদ্দেশে। ঘণ্টা খানেক পরেই পৌঁছে যাই আমাদের আকাঙ্ক্ষিত নন্দী হিলে।
এর সৌন্দর্য বলে বোঝানো যাবে না। মেঘ ভেদ করে ধীরে ধীরে আমরা উঠে গেলাম নন্দী হিলের চূড়ায় চার হাজার আট শ ৫১ ফুট ওপরে। মাথায় এল প্রথম ছবিটা তুলব দেশের পতাকা নিয়ে। আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিল না। মেঘে ঢাকা ছিল চারদিক। এর মধ্যেই ঝটপট ছবি তুলে ফেলি। এই ছিল আমাদের নন্দী হিলের যাত্রা। আসলে ছবি তোলার পর একটা জিনিস আরও ভালো মতো বুঝলাম আমরা। সেটা হলো দেশ ছেড়ে এলেই আসলে দেশের মর্ম বোঝা যায়। তাই আমাদের মনে একটাই কথা ভালোবাসি আমার সবুজ দেশ, মা, মাটি মাতৃভূমি বাংলাদেশকে।
(লেখক বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী)