মুম্বাইয়ে বাংলা বর্ষবরণ ও মুজিবনগর দিবস

বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করছেন শাহজাহান খান
বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করছেন শাহজাহান খান

ভারতের চলচ্চিত্র নগরী খ্যাত মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ও ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার) উপহাইকমিশনের চেন্সারি ভবনে এক সাংস্কৃতিক প্রীতি সম্মিলনী, বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, জামদানি শাড়ির প্রদর্শন ও বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবার সহকারে বাঙালি পরিবেশে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উল্লেখ, মন্ত্রী শাহজাহান খান মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিটে (২০১৬) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে যোগ দিতে ওই সময় মুম্বাই সফরে এসেছিলেন। বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বাংলাদেশ সরকার ও মহারাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, মুম্বাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান, ওয়েস্টার্ন নেভাল কমান্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হস্তশিল্প প্রদর্শনী
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হস্তশিল্প প্রদর্শনী

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপহাইকমিশনার সামিনা নাজ আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অতিথিদের উদ্দেশে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে তিনি বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনকে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একীভূত হওয়ার এক সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে অভিহিত করেন।
শাহজাহান খান বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ উপহাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের এ অনুষ্ঠান কেবলমাত্র এক সম্মিলনীই নয় বরং তা বাংলায় শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের যে সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে বিদেশের মাটিতে তার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এরপর তিনি ফিতা কেটে বর্ষবরণ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের একাংশ
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের একাংশ

বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ইলিশ মাছ, ভুনা খিচুড়ি, নানা পদের ভর্তা, পিঠা-পায়েস ও মিষ্টান্ন সহযোগে মধ্যাহ্নভোজ পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত একজন ভারতীয় বাঙালি বৈশাখের গান পরিবেন করেন।
উল্লেখ্য, একই দিন মন্ত্রী শাহজাহান খান মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিটে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদ্‌যাপন

বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে মুম্বাইয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসও উদ্‌যাপিত হয়েছে। ১৭ এপ্রিল রোববার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে উপহাইকমিশনার কর্তৃক জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয় এবং আলোচনা সভা, দোয়া প্রার্থনা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রত্যুষে মুম্বাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার সামিনা নাজ জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন। মুম্বাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিনিধি, উপহাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাসহ স্থানীয় আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বাণী পাঠ শেষে সামিনা নাজ আগত অতিথিদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করেন।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে পতাকা উত্তোলন করছেন সামিনা নাজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে পতাকা উত্তোলন করছেন সামিনা নাজ

সামিনা নাজ তার বক্তব্যে আজকের এ দিনটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পর মুজিবনগর সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে এ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
তিনি তার বক্তব্যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং জাতীয় চার নেতা ও ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের সকল সদস্যদের ভূমিকার কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় তিনি মুজিবনগর সরকার গঠনসহ আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তার বিজয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
আলোচনা পর ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের জীবিত সদস্যদের সুস্থতা ও দেশের সুখ-সমৃদ্ধি এবং সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনভিত্তিক আমাদের বঙ্গবন্ধু (Bangabandhu: Our Great Leader) শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।