কিলিমাঞ্জারোর দেশে রঙ্গে রঙ্গে বৈশাখ

বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য
বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য

তানজানিয়ায় আসার আগে এ দেশের একটি জিনিসই চিনতাম শ্বেতশুভ্র বরফের মুকুট মাথায় নিয়ে গম্ভীরভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কিলিমাঞ্জারো। কল্পনা করতাম জানালা খুললেই দেখা মিলবে শুভ্র পর্বতের। কিন্তু বাস্তবে আমরা অধিকাংশ বাঙালিরা থাকি ভারত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শান্তির শহর দারুস সালামে। বাংলাদেশ থেকে হাজারো মাইল দূরে এ শহরে প্রায় এক শ বাংলাদেশির বাস। বরাবরের মতোই মিলিত হয়েছিলাম বৈশাখের রঙ্গে নিজেদের রাঙিয়ে নিতে। আয়োজনে হয়তো কমতি ছিল কিন্তু তাতে রঙিন হয়ে উঠতে কারওই আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
দারুস সালামের আবহাওয়া পাল্টে গিয়ে কয়েক দিন যাবৎ বৈশাখের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু প্রায় সকলেই পৌঁছে গিয়েছিলাম যথাসময়ে। বৃষ্টির ঝিরিঝিরিতে অবকাশযাপন কেন্দ্রটি হয়ে উঠেছিল আরেক টুকরো বাংলাদেশ। সবার ভাবনাগুলো যেন কোনো হাওয়ায় মেতে উঠেছিল। লক্ষ করার মতো ছিল সবার পোশাক-আশাক। দিনটিকে সামনে রেখে কেন সবাই সারা বছর অপেক্ষা করে এটা বোঝার জন্য ভাবনার দরকার নেই, সবার রঙিন মুখগুলোই যথেষ্ট। নতুন সংযোজন ছিল পিঠা উৎসব। জুরি বোর্ডের ফল ঘোষণার আগে সবার উৎকণ্ঠা আয়োজনে সার্থকতা এনেছে। ফলাফল যাই হোক মাছ পিঠা, দধি, পাটিসাপটা, ভাজাকুলি, নারকেল চূড়, দুধপুলি, নকশি পিঠা, হালুয়া খাওয়ার জন্য সবার আগ্রহ ও তৃপ্তিতে অংশগ্রহণকারীরাও উৎসাহ পেয়েছেন। পরের আয়োজনে পিঠা উৎসব আরও জমজমাট হবে এটা নিশ্চিত। 

বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য
বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য


দুপরের খাবারে ছিল বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। পান্তা-ইলিশের অভাব বোধ করলেও রসগোল্লার রসে আহার শেষ করলাম তৃপ্তি সহকারে। এরপর ছিল খেলার আয়োজন। বাচ্চাদের চকলেট দৌড়, মেয়েদের জন্য বালিশ খেলা ও ছেলেদের উল্টো দৌড়। চকলেট দৌড়ে প্রথম হওয়ার চেয়ে অনেকেই আগ্রহী ছিল চকলেট খাওয়ার জন্য। সে জন্য দৌড়ের মাঝখানেই চকলেট খেয়ে ফেলে অনেকেই। তাই সেরা নির্বাচন করতে বিচারকদের খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিল। সবচেয়ে মজার দৃশ্য উপহার দেয় ছেলেদের উল্টো দৌড়। বাঁশি দেওয়ার আগেই দৌড় দিয়ে অনেকেই প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়া বা উল্টে পড়া অনুমিতভাবেই সকলকে মজা দিয়েছে।
আয়োজনের শেষভাগে ছিল র‍্যাফেল ড্র। সকলের অংশগ্রহণে উত্তেজনার মাঝেও ছিল আনন্দের খোরাক। অনিচ্ছা স্বত্বেও শেষ পর্দাটুকু টানতেই হয়েছিল। একে একে সবাই বিদায় নিতে থাকে, পেছনে পড়ে থাকে সব গ্লানি আর ক্লান্তি। আর নিয়ে যায় নব বছরের অনুপ্রেরণা ও শুভকামনা।

বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য
বৈশাখী অনুষ্ঠানের দৃশ্য

সত্যি দূর প্রবাসে সকলের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি দূরে ফেলে আসা দেশের কথাই বারবার মনে করিয়ে দেবে।
অনুষ্ঠানে দারুস সালামে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন পৃথিবীর বৃহৎ উন্নয়নমূলক বাংলাদেশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও বাংলাদেশের বৃহত্তম ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ারের কর্মকর্তারা।