প্রবাসে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাঙালিত্ব ধরে রাখতে হবে

নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ২৫তম বইমেলার উদ্বোধন করেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন। ছবি: ইব্রাহীম চৌধুরী
নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ২৫তম বইমেলার উদ্বোধন করেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন। ছবি: ইব্রাহীম চৌধুরী

জাতীয়তার পরিচয় অভিন্ন হলেও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লোকজনের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালিদের আধিপত্য আজ সর্বত্র। বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারে প্রবাসীরা পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা ভাষা আর বাঙালিত্ব আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতির এ প্রসার জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রার পরিচয় বহন করে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আমাদের বাঙালিত্বকে ধরে রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। গত শুক্রবার থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ২৫তম বইমেলা। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯-এ ফিতা কেটে এ উৎসব ও মেলার উদ্বোধন করেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কবি গুলতেকিন খান ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ভয়েস অব আমেরিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, মাযহারুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান রিটন, লেখক জসিম মল্লিক, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসানসহ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলিনী মুখোপাধ্যায়সহ বেশ কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক।

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘২৫টি বছর কম সময় নয়, এ ২৫ বছর বাংলার যে সংগ্রাম প্রবাসে চলছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা চাই পৃথিবীতে বাংলার জয় হোক। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা উৎসব এবং মেলা আয়োজন করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন গত ২৫ বছর থেকে নিউইয়র্কে বইমেলার আয়োজন করে আসছে। এবারের মেলার আহ্বায়ক লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বইমেলা এবং বাংলা উৎসবকে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের জন্য উৎসর্গ করার ঘোষণা দেন।
বইমেলার উদ্বোধনের আগে ডাইভার্সিটি প্লাজায় শোভাযাত্রাপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের মধ্যে আনিসুল হক, লুৎফুর রহমান রিটনসহ বেশ কয়েকজন লেখক-সাহিত্যিক ছাড়াও বিশিষ্ট নাট্যজন জামাল উদ্দিন হোসেন, নিনি ওয়াহেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। শোভাযাত্রাটি ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে শুরু হয়ে ৭৩ স্ট্রিট হয়ে ৭৭ স্ট্রিটের পিএস ৬৯ বইমেলা স্থলে এসে শেষ হয়।
পিএস ৬৯ এসে শুরু হয় বাংলা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শিশু শিল্পীদের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ঢাকা থেকে আগত অতিথিসহ অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ২৫তম বইমেলার অনুষ্ঠানে কবি গুলতেকিন খান, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। ছবি: ইব্রাহীম চৌধুরী
আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ২৫তম বইমেলার অনুষ্ঠানে কবি গুলতেকিন খান, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। ছবি: ইব্রাহীম চৌধুরী

মুক্তধারা ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত নিউইয়র্ক বইমেলা এবার ২৫ বছরে পা রাখল। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বাইরে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এই বৃহত্তম মেলায় সেলিনা হোসেন ‘লেখকের সামাজিক দায়িত্ব’ শীর্ষক মূল ভাষণ দেন। বইমেলায় একাত্তরের সহযোদ্ধা হিসাবে ড. ডেভিড নেলিনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। খ্যাতনামা এই মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সে বছর জুলাই মাসে বালটিমোরে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ পদ্মা বন্দরে প্রবেশ করার বিরুদ্ধে যাঁরা বিক্ষোভে অংশ নেন, ড. নেলিন ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
উৎসব ও মেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা জানান, মেলা উপলক্ষে কলকাতা এবং ঢাকা থেকে প্রকাশকেরা এসেছেন। প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বইমেলা ও বাংলা উৎসব নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের দূরের অঙ্গরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে লেখকেরা এসেছেন নিউইয়র্কে। বইমেলা ও বাংলা উৎসব শেষ হবে রোববার। মেলায় বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রবাসীরা উপভোগ করছেন সংগীতানুষ্ঠান।
নিউইয়র্কের বইমেলায় প্রথমবারের মতো যোগ দিচ্ছেন লেখক গুলকেতিন খান। তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দূর দেশে বাংলা বই নিয়ে এ উৎসব খুবই অনুপ্রেরণার।
প্রয়াত লেখক হ‌ুমায়ূন আহমেদকে মেলায় এসে আলাপচারিতায় স্মরণ করছেন প্রবাসীরা। মেলা প্রাঙ্গণে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রবাসী প্রযুক্তিবিদ ইশতেহাক চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, হ‌ুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে বড় হয়েছেন। প্রয়াত লেখকের প্রতি মমতাভরা শ্রদ্ধা জানালেন এ প্রবাসী তাঁর প্রতিক্রিয়ায়।