আজান শুনে ইফতারি-সেহ্রি করা হয় না

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

রোজার মাসে দেশের বাইরে কোন ব্যাপারটা সবচেয়ে মিস করি? আগে জানতাম না।
এখন মনে হয় ব্যাপারটা আমি জানি!
তখন স্কুলে পড়ি। আপুদের বাড়িতে থাকি। শেষ রাতে সেহ্‌রি খেতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকাডাকির একপর্যায়ে আপু বলতেন, শেষবার ডাকলাম, এরপর কিন্তু আর ডাকব না। না উঠলে সারা দিন না খেয়ে রোজা রাখবি। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ার কথা, কিন্তু আমি উঠতাম না। জানতাম শেষবারের পরেও আরেকবার আছে; তারপর আরও কয়েকবার!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন দিনগুলোতে সারা রাতব্যাপী আড্ডা হতো। কখনো টিএসসি, কখনো ভিসি চত্বর কখনো বা পলাশীর মোড়। আমরা ঘুরে বেড়াতাম রাতজাগা পাখি হয়ে। আড্ডা শেষে দলবেঁধে ভোররাতে চানখাঁরপুলে যখন সেহ্‌রি খেতাম রাতটাকে তখনো মনে হতো তরুণ। আহা! সেই নির্ঘুম রাতগুলো।

মাঝে মাঝে হলে ইফতার করতাম একসঙ্গে। এখন অনেক মিস করি!
ইফতার হতো খুবই সাদামাটা। ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজি-বেগুনি, জিলাপি, সালাদ। যেদিন ফল থাকত শরবত থাকত না আবার যেদিন শরবত থাকত তো ফল থাকত না। একদিন দুটোই ছিল। সেদিন আমার সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১১৬ নম্বর রুমে ছোটখাটো একটা বিতর্ক হয়ে গেল।
বিষয়বস্তু ফল ইফতারের শুরুতে খাওয়া হবে, না শেষে।
মাসুম বা অপু বলেছিল, ফল হলো নিজের প্রতি গিফট, ধর অনেক পরিশ্রমের পর তুই একটা গিফট পেলি, বল ভালো লাগবে কিনা? আমি মনে মনে ভাবলাম, বাহ ঠিকই তো!
শাকিল বলল, কী দরকার পুরো খালি একটা পেটে শুরুতেই ভাজাপোড়া খাওয়ার। তার চেয়ে প্রথমে ফল খেয়ে পেটে একটা আস্তর বানাই তারপর তেলে ভাঁজা অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো খাই। আমি বললাম, দোস্ত ঠিকই বলছিস, সবচেয়ে ভালো হয় ওপরে আরেকটা আস্তর বানালে। দুই আস্তরের মাঝখানে পড়ে ভাঁজা পোড়া সব চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।
প্রবাসে হঠাৎ একদিন ইফতারের আগ মুহূর্তে আবিষ্কার করলাম, সবচেয়ে যে ব্যাপারটা মিস করি সেটা হলো আজান। আজান মানেই ইফতারের শুরু, আজান মানে সেহ্‌রির শেষ। আজান শুনে সেহ্‌রি আর ইফতার করা হয় না। বলতে বলতে মনে পড়ে গেল...আমাদের এলাকার মুয়াজ্জিনের সব ওয়াক্তের আজান দিতে সময় লাগত চার মিনিট আর ইফতারের সময় মাগরিবের আজান দিতে লাগত আড়াই মিনিট। কারণটা না হয় নাই বললাম।