স্বপ্নকে কখনো হারিয়ে যেতে দিতে নেই

স্বামীর সঙ্গে লেখিকা
স্বামীর সঙ্গে লেখিকা

আমার বরের নতুন কর্মস্থল (Cuny statein island colleg) নিউইয়র্কের ভেতরেই। কিন্তু দেখে মনে হয় নিউইয়র্কের বাইরে নিরবচ্ছিন্ন কোনো একটা দ্বীপ। আমার বর ক্যালকুলাস আর কম্পিউটার সায়েন্স পড়াবে এখানে। ক্যাম্পাসটাতে ঢুকেই মনে হলো সৌন্দর্যের রানি। কোনো এক মফস্বলের কাদামাটি। সবুজে হলুদে মাখামাখি। দিগন্ত জোড়া সরষে খেত। শেওলা বাঁধানো পুকুর ঘাট, শান্ত কোনো পুকুরের জল। আমার কাছে তা হলো অনাবিল শান্তি। আর তা-ই আমার কাছে সৌন্দর্য।

কত আধুনিক জীবন এখন। কিন্তু কোথায় যেন সব দখল করে রেখেছে আমার সেই সনাতন জীবন। মাঝ রাতে ডানা ঝাপটানো কোনো পাখির ডাক। দরদ মাখা কণ্ঠে ভেসে আসা কোনো সুর। আধো আধো ঘুম, নিঃশব্দ গভীর রাত। আহা, বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠত তখন। তাই যেখানেই যাই, আমি মনে মনে আজও তা খুঁজি।

লেখিকার স্বামীর আইডি
লেখিকার স্বামীর আইডি

এই কলেজের ক্যাম্পাসটা ঠিক সেইরকম। যা আমি প্রতিনিয়ত অতি আধুনিকতার আড়ালে খুঁজে বেড়াই। আমি আমার ছোট ছেলে সুবর্ণকে নিয়ে হাঁটছিলাম। কারণ এত সুন্দর জায়গা দেখে আমার বড় ছেলে অপূর্ব বলছিল, আম্মু জায়গাটা খুব সুন্দর, আমি একটু কিছু লিখি। বললাম, লেখ।
ও যেখানেই যাক না কেন, তার হাতে অবশ্যই কাগজ কলম থাকে তার ভালো লাগাকে বন্দী করে রাখার জন্য। ওর কোনো কিছুতে খুব একটা না করা লাগে না আমার। কেন জানি বিধাতা তাকে সেভাবেই যেন গড়েছেন, যেভাবেই আমি তাকে প্রতি মুহূর্তে চাই।

আমি আনমনে হাঁটছি। অনেক দূর থেকে দেখলাম আমার বর দৌড়ে আসছে আর বলছে, রিমু আইডি পেয়েছি, আইডি পেয়েছি। হাতে আইডিটা উঁচু করে ধরা, মুখে জয়ের হাসি।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা দেখছি এই মুহূর্তে। কোনো এক স্বপ্নজয়ী মানুষের আনন্দ দেখছি আমি! সেই স্বপ্ন জয়ের তীব্রতার প্লাবনে কতক্ষণ যে ডুবে ছিলাম তা আর বলতে পারব না।
তাঁর আজীবন স্বপ্ন কলেজের অধ্যাপক হওয়া। আজ সে তা পেরেছে। মনে মনে বললাম, স্বপ্নকে কখনো হারিয়ে যেতে দিতে নেই।