আব্বুকে ছাড়া প্রথম ঈদ

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

জীবনে এর আগে অনেকবার ঈদ এসেছে, তবে এবারের ঈদ অন্যরকম। কেমন জানি রং, আমেজ ও আনন্দহীন! কোরবানির ঈদ নিয়ে আব্বুর একটা অন্যরকম আবেগ আর উত্তেজনা ছিল। চাঁদ ওঠার পর থেকে ঘরে মুরগি আনা বন্ধ। রুটি পিঠা বানানোর চাল, মরিচ ও মসলা, তারপর গরুর জন্য হাটে দৌড়াদৌড়ি।
রুটি বানাতেন অনেকগুলো। নিজে কোরবানির আগের রাত সারা এলাকা থেকে অনেক নারীকে জোগাড় করতেন শুধু রুটি বানানোর জন্য। সারা রাত রুটি বানানোর বিরাট যজ্ঞ! শেষ হতে হতে প্রায়শ সকাল হয়ে যেত।
এরপর কোরবানির মাংস বিতরণ পর্ব। যারা কোরবানি দিতে পারতেন না তাদের দিতেন কাঁচা মাংস। প্রায় প্রতিবার দুটি করে গরু-মহিষ জবাই করা হতো। কিন্তু দিন শেষে আব্বুর ফ্যাকাশে চেহারা। উনি নিজের পছন্দ মতো মানুষকে দিতে পারেননি। আমাদের বলতেন, দুটি দিয়ে হয় না তো, যে পরিমাণ মানুষ, তাতে পাঁচটা দরকার।
যারা কোরবানি দিতেন তাদের আব্বু রান্না করা মাংস দিতেন। প্রতি ঘরে ঘরে। নিজেই তদারকি করতেন, কেউ বাদ পড়ল কিনা। যেবার মাংস একটু বেশি হতো ওইবার খুব খুশি হতেন মানুষকে একটু বেশি দিতে পারলে।
আগের ঈদেও আব্বু ছিলেন। সবকিছু তদারকি করেছেন। কিন্তু এবার তিনি এমন রাগ করেছেন আমাদের সঙ্গে, চলে গেলেন না ফেরার জগতে! আব্বু ছাড়া ঈদ আমি কল্পনাও করতে পারি না।

ছোট বোনের বিয়ে হলো গত ফেব্রুয়ারিতে। সে বলছিল, এর আগে মনে হতো বাড়ি গেলেই আব্বুকে দেখব, কিন্তু যখন মনে পড়ে আব্বুর চোখ বন্ধ, নিশ্বাস ধীর থেকে ধীর হচ্ছে, মনে হচ্ছে এইই শেষবারের মতো নিশ্বাস নিচ্ছেন। পাশে শ দেড়েক মানুষ সুরা ইয়াসিন পড়ছেন, কেউ বা কলেমা। যখন তা মনে পড়ে তখনই গা শিউরে ওঠে। আব্বুকে তো শেষবারের মতো দেখে ফেলেছি, এখন আব্বুর কবর আছে।
আসলে আমি আগে কখনই অনুভব করতে পারিনি, ‘অ পুত আঁরে শেষ দেহা চাই ল, আর দেইক্তিনি’ এত তাড়াতাড়ি সত্য হয়ে যাবে। এবারও কোরবানি হচ্ছে, কিন্তু আব্বু নেই, আব্বু তদারকি করবেন না।
কোরবানির আসল মহিমা হলো ত্যাগ, আব্বুর সারা জীবনে দেখেছি একটা মানুষ কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন। কী পরিমাণ নিঃস্বার্থ হতে পারেন। এর কিঞ্চিৎ পরিমাণও যদি কেউ অনুসরণ অনুকরণ করতে পারেন তাহলে তাঁর জীবন সার্থক।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা, ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হোক সবার জীবন।