নজরদারিতে বিক্রি বেড়েছে পেট্রল ও অকটেনের

বিপিসি সূত্র জানায়, আগে বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে অপরিশোধিত জ্বালানি (কনডেনসেট) বাজারজাত করার অভিযোগ ছিল। এবার বেসরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার রূপসা ট্যাংক অ্যান্ড রিফাইনারি লিমিটেডের বিরুদ্ধে রং তৈরির কাঁচামাল মিনারেল টারপেনটাইন (এমটিটি) চোরাইপথে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। তবে ট্যাংক-লরির চালক জব্দ হওয়া জ্বালানিকে পেট্রল বলে দাবি করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার পুলিশ সাড়ে ৮ হাজার লিটার জ্বালানি ভর্তি একটি ট্যাংক-লরি জব্দ ও গাড়ির চালককে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ১৩ ডিসেম্বর একটি মামলা করা হয়েছে।

বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উত্তরবঙ্গে পেট্রল, অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানির বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপিসির রাজস্ব আয়ও কমে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে গত বছর দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। জেলা প্রশাসনগুলোর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও নজরদারির কারণে চোরাইপথে জ্বালানি বিক্রি কমেছে।

বিপিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের নজরদারির কারণে গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন পেট্রল বিক্রির পরিমাণ ৩০০ থেকে ৭০০ টনে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে অকটেন বিক্রি গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৫৪০ টনে উন্নীত হয়েছে। দেশে বছরে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন পেট্রল ও প্রায় ২ লাখ টন অকটেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক ‘গোপন’ প্রতিবেদনে পদ্মা অয়েলের বিরুদ্ধে অপরিশোধিত জ্বালানি (কনডেনসেট) বাজারজাত করার অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর পদ্মা অয়েলের বিরুদ্ধে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আর এবার রূপসা ট্যাংক অ্যান্ড রিফাইনারি লিমিটেডের বিরুদ্ধে চোরাইপথে এমটিটি বাজারজাতের অভিযোগ উঠেছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, রং তৈরির কাঁচামাল হিসেবে এমটিটি ব্যবহৃত হয়। উত্তরবঙ্গে পেট্রল ও অকটেনের সঙ্গে অপরিশোধিত জ্বালানি এবং মিনারেল টারপেনটাইন বা এমটিটি মিশিয়ে বিক্রির জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এতে গাড়ির আয়ুষ্কাল কমে যায় এবং ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

বগুড়ায় অবস্থিত জ্বালানি তেল বাজারজাত করার বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তিন সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপক গত ১৫ ডিসেম্বর যৌথ স্বাক্ষরে একটি প্রতিবেদন চট্টগ্রামের সদর দপ্তরে পাঠান। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর শাহজাদপুর থানার এসআই কমল কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শাহজাদপুরের রবীন্দ্র ভাস্কর্যের কাছে ট্যাংক-লরিচালকসহ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার লিটার পেট্রল জব্দ করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর থানার আঙিনায় তাঁরা সরেজমিন তেলসহ ট্যাংক-লরিটি দেখতে পান। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা মেট্রো-ম-০৯-০০০৯ নম্বরের ট্যাংক-লরির মালিক করিম মোল্লা। আর চালক হলেন আশরাফুল ইসলাম ওরফে কমল। তাঁদের দুজনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায়। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানায় দণ্ডবিধির ৪১৩ ধারায় একটি মামলা হয়েছে।

যমুনা অয়েল কোম্পানির বগুড়া বিভাগীয় সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, রূপসা থেকে চোরাইপথে জ্বালানি পাচারের সময় শাহজাদপুর থানার পুলিশ তা জব্দ করেছে। চালানপত্রে এমটিটি উল্লেখ রয়েছে, যা রং তৈরির কাঁচামাল। আর চালক বলেছেন এগুলো পেট্রল। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

শাহজাদপুর থানার এসআই ও মামলার বাদী কমল কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে এই জ্বালানি চোরাইপথে বাঘাইবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এটি পেট্রল বলে চালক জানিয়েছে। মামলা যেহেতু হয়েছে, তাই আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

রূপসা ট্যাংক অ্যান্ড রিফাইনারি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমটিটি সরবরাহ করেছি। কিন্তু কেউ তা ভেজাল করলে আমাদের পক্ষে সব তদারক করা সম্ভব নয়। বিপিসির দায়িত্ব অনেক।’