এসডিজি অর্জনে গুরুত্ব দিতে হবে সুশাসনকে

.
.

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের প্রতিটি পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দূর করতে হবে। গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী পরিসংখ্যান ভান্ডার তৈরি করতে হবে। এসডিজি নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকে আরও সম্পৃক্ত করা উচিত।
গতকাল বুধবার এসডিজি নিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে এক আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২০ সালের আগেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আর চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বের বিস্ময়। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য দূর হবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগ হচ্ছে সবাইকে নিয়েই উন্নয়ন। কাউকে পিছিয়ে রেখে টেকসই অগ্রগতি অর্জন হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত সুশাসন। সুশাসন না থাকলে এত উন্নয়ন কীভাবে হচ্ছে? দুর্নীতি কতটা আছে, তা জানি না। তবে অপচয় আছে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজি অর্জনে কোন মন্ত্রণালয় বছরওয়ারী কী কাজ করবে, এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিবছরই তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে। এমনকি কর্মকর্তাদের পারদর্শিতাও মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এভাবে পুরো এসডিজি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি জবাবদিহির মধ্যে থাকবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় জনসচেতনতা বাড়াতে পারে গণমাধ্যম।

দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের অঙ্গীকারের অভাব নেই। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে। পরিসংখ্যানকে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে গণমাধ্যম। আবার সামাজিক জনসচেতনতা তৈরি করে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সহজ করতে পারে গণমাধ্যম।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া একটি ভালো উদ্যোগ। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, এটা সহজেই জানতে পারবে গণমাধ্যম। এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।

ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, এসডিজি নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। এসডিজি বাস্তবায়নকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। সিরিয়ায় একসময় বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এখন সিরিয়ার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন।

সেমিনারে এসডিজি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির সদস্য শামসুল আলম। এসডিজি বাস্তবায়নে কীভাবে গণমাধ্যম সহযোগিতা করতে পারে, তা তুলে ধরা হয় প্রবন্ধে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজা জেসমিন, জিইডির প্রধান নকিব বিন মাহবুবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের অগ্রগতি বেগবান করতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নিরসনে আরও বেশি যত্নবান হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।