টিপিপি ভেঙে গেলে বাংলাদেশেরই লাভ

.
.

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তি বা টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে টিপিপি এখন ভাঙনের মুখে। সত্যি সত্যি যদি ১২-জাতি নিয়ে গঠিত এই বাণিজ্য চুক্তি বাতিল হয়, তাহলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন যদি সংরক্ষণবাদী বা প্রোটেকশনিস্ট নীতি অবলম্বন করে, তার ফলে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ রপ্তানিকারক দেশ বিপদের মুখে পড়তে পারে।
এই অভিমত প্রেসিডেন্ট ওবামার সাবেক বিশেষ সহকারী ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এশীয় বিষয়ক পরিচালক এভিন মেডেইরসের। প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে ২৫ জানুয়ারি নিউইয়র্কে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ভিয়েতনাম আশা করেছিল টিপিপির অধীনে তারা বিশেষভাবে লাভবান হবে। এই চুক্তির অধীনে শ্রম পরিবেশের উন্নতি ও অধিকতর দক্ষতা অর্জনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামে উৎপাদিত পণ্য, বিশেষত তৈরি পোশাক রপ্তানির বাড়তি সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো যেসব দেশ, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এখন টিপিপি যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের লাভই হবে।
এশিয়া সোসাইটিতে ‘নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ও এশিয়া’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে এভিন মেডেইরস নিউইয়র্কে এসেছিলেন। আলোচনা শেষে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর বাণিজ্য প্রশ্নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ সমর্থন করেন—এমন একাধিক উপদেষ্টা রয়েছেন। ট্রাম্প নিজেই ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতি ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই নীতি অনুসরণ করে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে বাংলাদেশের মতো আমেরিকায় রপ্তানিকারক দেশসমূহ সমস্যায় পড়বে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। এক যুক্তরাষ্ট্রেই বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে।

এশিয়া সোসাইটি আয়োজিত এই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ বক্তা টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে একদিকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাবে, অন্যদিকে প্রভাব বাড়বে চীনের। তাঁরা মনে করেন, বহুজাতিক বাণিজ্য চুক্তির বদলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নির্মাণের যে নীতি ট্রাম্প প্রশাসন অনুসরণের কথা ভাবছে, তা নতুন জটিলতার জন্ম দেবে। একাধিক বক্তা মন্তব্য করেন, যথেষ্ট ভাবনাচিন্তার পর ট্রাম্প টিপিপি থেকে প্রত্যাহারে সিদ্ধান্তটি নেননি। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক স্কট কেনেডি বলেন, কেউ যদি ট্রাম্পকে কোনো ঘরে একা পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেন, তাহলে তিনি তাঁর মত বদলাবেন—এমন সম্ভাবনা বাতিল করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় ২০১৫ সালের অক্টোবরে ১২টি দেশের মধ্যে টিপিপি চুক্তি হয়। এতে স্বাক্ষর করা দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ এই দেশগুলোর দখলে।