বাংলাদেশে তিন ধাপের কাজ নয় ধাপে হয়

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) মাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় (বাঁ থেকে) সংগঠনের সদস্য এডউইন বোলস, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান l ছবি: এফআইসিসিআইয়ের সৌজন্যে
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) মাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় (বাঁ থেকে) সংগঠনের সদস্য এডউইন বোলস, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান l ছবি: এফআইসিসিআইয়ের সৌজন্যে

বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ-প্রক্রিয়ার অনুমোদন দিতে তিন ধাপের কাজ নয় ধাপে করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনতে বিডা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) মাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন বিডার নির্বাহী প্রধান। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এ সভায় বক্তব্য দেন এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান প্রমুখ।
কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কাজ যেটি তিন ধাপে শেষ করা যায়, সেটি এখানে নয় ধাপে শেষ করা হয়। বিনিয়োগ-সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই অপ্রয়োজনীয় ধাপগুলো কমিয়ে আনতে বিডা কাজ করছে। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারীসহ সব পক্ষের মতামত যুক্ত করে সমন্বিত কর্মকৌশলে কাজ চলছে।’
বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ বা ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি আনতে বিডার উদ্যোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে দুই ধাপ উন্নতি হলেও এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৭৬। এটি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বকে সঠিক ইঙ্গিত দেয় না। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনতে বিডা কাজ করছে।
ডুয়িং বিজনেস সূচকে উন্নতি করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার তথ্য দিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিদের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি হলেও আইনি জটিলতার কারণে এসব চুক্তি সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। সময়মতো চুক্তি বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিডা কাজ করছে। এ ছাড়া কোম্পানি আইন সংস্কার, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এফআইসিসিআইয়ের সদস্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগ করতে যে সমস্যায় আপনারা পড়ছেন, সেগুলা আমাকে জানান। আপনাদের সমস্যাগুলো আমি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব। আর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইতিবাচক দিকগুলো আপনারা বাইরের বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরুন।’
এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এফডিআইয়ের এ পরিমাণ অনেক কম, কারণ বাংলাদেশে ব্যবসা করার খরচ বেশি। লালফিতার দৌরাত্ম্য, অপ্রতুল অবকাঠামো সেবা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও জমির সমস্যার কারণে এ দেশে ব্যবসা করার খরচ বেশি। এফডিআইয়ের প্রতিশ্রুত অর্থ পেতে হলে বন্দর, সড়ক, রেল, জ্বালানি অবকাঠামো, সরকারি কর্মকৌশল ও সুশাসন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে।
রূপালী চৌধুরী বলেন, প্রশাসনিক বাধা-বিপত্তির কারণে বর্তমান ও সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেভাবে আশা করে, বিডা সেভাবে কাজ করতে পারছে না। এফডিআই বাড়াতে হলে বিডাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।
এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্র্যাচুইটি তহবিলের অর্থে কেনা সঞ্চয়পত্রে মুনাফা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বিদেশি নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসার প্রক্রিয়া সহজ করা, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের মুনাফার ওপর কর সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার দাবি জানান।