শেষ কার্যদিবসেও বড় দরপতন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০৯ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ কমেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটিও এদিন ৩৪৩ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ কমে নেমে এসেছে প্রায় ১৬ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে। পাশাপাশি উভয় বাজারে লেনদেনের পরিমাণও আগের দিনের চেয়ে কমেছে।

বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক উত্থানের কারণে ব্যাংক খাতে তদারকি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে প্রতি সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ কারণে সপ্তাহের শেষ দিনে এসে বাজারে বিক্রির চাপ কিছুটা বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সম্প্রতি নতুন করে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত তথ্য জানাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছিল। ওই দিন এক দিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি কমেছিল। ওই দিন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। যেখানে গভর্নর শেয়ারবাজারের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন। তার তাৎক্ষণিক প্রভাবে ওই দিনই বাজারে বড় দরপতন ঘটেছিল। সপ্তাহের শেষটিও হয়েছে বড় দরপতন দিয়ে। এর ফলে সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৫ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো আমাদের বাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে কোম্পানিভিত্তিক চিন্তা করেন না। যার কারণে কোম্পানির মানও যথাযথভাবে যাচাই করে শেয়ার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে যেকোনো খবর বা বক্তব্যে সার্বিকভাবে বাজার প্রভাবিত হয়। অধিক সংখ্যক বিনিয়োগকারী তাঁর নিজের হাতের শেয়ারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সার্বিকভাবে বাজার প্রভাবিত হতে পারে—এ ভিত্তিতে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এতে বিক্রির প্রবণতা শুরু হলে অধিক সংখ্যক বিনিয়োগকারী বিক্রির প্রতি ঝোঁকেন।’

মোহাম্মদ হেলাল আরও বলেন, বর্তমানে বাজার যে অবস্থায় রয়েছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে ভীতি কাজ করছে, তা দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা এই শিক্ষকের।

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের ফলে সূচকেরও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এদিন ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির গড়ে ৩ শতাংশ মূল্য কমেছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ করে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিরই দরপতন ঘটেছে। আর আর্থিক খাতের লেনদেন হওয়া ২৩ কোম্পানির মধ্যে সব কটিরই দাম কমেছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স। এদিন এককভাবে ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রায় ৩২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৯০ পয়সা বা সোয়া ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৩০ পয়সায়। ডিএসইতে এদিন মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল রহিম টেক্সটাইল। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ২০ টাকা বা ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০ টাকায়।

দিন শেষে গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৪৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৩৭ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।