এক দিনে বিক্রি ৫ কোটি টাকার ফুল

পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। সে চাহিদার একটা বড় অংশ মেটায় যশোরের গদখালী পাইকারি মোকাম। সেখানে ফুল বাঁধার কাজে ব্যস্ত এক শ্রমিক। ছবিটি গতকাল তোলা l এহসান–উদ–দৌলা
পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। সে চাহিদার একটা বড় অংশ মেটায় যশোরের গদখালী পাইকারি মোকাম। সেখানে ফুল বাঁধার কাজে ব্যস্ত এক শ্রমিক। ছবিটি গতকাল তোলা l এহসান–উদ–দৌলা

পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবারও যশোরের গদখালী থেকে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ ফুল সারা দেশে সরবরাহ হয়েছে। শুধু গতকাল রোববারই দেশের বৃহৎ ফুলের মোকাম থেকে অন্তত ৫ কোটি টাকার গোলাপ, জারবেরা ও গ্লাডিওলাস পাঠানো হয়েছে জেলায় জেলায়।
দিবস দুটি সামনে রেখে ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে গদখালীর ফুল সারা দেশে পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে গতকালই যেন ছিল ফুলচাষি ও ব্যাপারীদের কাছে সবচেয়ে আনন্দময় এক দিন। কারণ, এদিনই বছরের সবচেয়ে বেশি ফুল কেনাবেচা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, দুটি দিবস উপলক্ষে শুধু আজ রোববারই গদখালীর বাজার থেকে ৭ লাখ গোলাপ, দেড় লাখ জারবেরা ও ৬ লাখের মতো গ্লাডিওলাস দেশের বিভিন্ন স্থানের ফুলের হাটে পাঠানো হয়েছে। যার দাম অন্তত ৫ কোটি টাকা।
সাধারণত সকাল আটটার মধ্যে গদখালীর পাইকারি ফুলের মোকামের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত কৃষক ও ব্যাপারীরা ফুল কেনাবেচা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। কৃষকেরা সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফুল তুলে হাটে নিয়ে আসতে শুরু করেন। ব্যাপারীরা সেই ফুল কিনে পিকআপে ভর্তি করে সারা দেশে পাঠান। এ ছাড়া যাত্রীবাহী পরিবহনের ছাদে করেও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে ফুল।
আবদুর রহিম বলেন, মোট ফুলের ৫০ শতাংশের মতো গেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। আর বাকি ৫০ শতাংশ পাঠানো হয়েছে সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে। গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির চালানের মাধ্যমে এসব ফুল পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি ফুল বাজারের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল হাটে প্রতিটি গোলাপ ৫ থেকে ৮ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৫ থেকে ১০ টাকা ও রজনীগন্ধা ২ থেকে সাড়ে ৩ টাকা পাইকারি দামে বেচাকেনা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ভালো দামে বিক্রির জন্য গোলাপে ক্যাপ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। রোববার সকালে পাঁচ হাজার গোলাপ তুলে হাটে আনতেই প্রতিটি ৬ টাকা দরে মুহূর্তেই ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে।
মনজুর আলম আরও বলেন, গত চার দিনে তিনি লাখখানেক টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এবারে দুই বিঘা জমিতে গোলাপ, তিন বিঘাতে জারবেরা ও দুই বিঘাতে গ্লাডিওলাস ফুলের আবাদ রয়েছে তাঁর। গোলাপের ভালো দাম পেয়ে মনজুর আলমের মতো ফুলচাষিরা ভীষণ খুশি।
গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গদখালী মোকামে ১৫-২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছরে এ জেলায় মোট ৬৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষই বেশি হয়েছে।