আরও নতুন নতুন পণ্য আনছে নভো নরডিস্ক

ডেনমার্কভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নভো নরডিস্কের করপোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার উলভস্কজোল্ড প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিক্সটার্ড ফ্লেক্সপেন’।
এত দিন ডায়াবেটিসের রোগী ইনসুলিন নিতেন কলমের মতো একটি যন্ত্রের সহায়তায়। নেওয়ার আগে ভায়াল থেকে ওই কলমে ইনসুলিন ভর্তি করা হতো, তারপর তা নিজে বা অন্যের সহায়তায় নিজের শরীরে ঢোকাতেন বা ইনজেক্ট করতেন। মিক্সটার্ড ফ্লেক্সপেনে সুবিধা হচ্ছে, এতে আগে থেকেই ইনসুলিন ঢোকানো থাকে। ভায়াল সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয় না। গত জানুয়ারি থেকে এই পণ্য বাংলাদেশে আছে।
পিটার উলভস্কজোল্ডের সঙ্গে ১৩ মার্চ কথা হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার বারডেম-২ হাসপাতালে। তিনি টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেখতে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নভো নরডিস্কের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক একটি বড় খবরও আছে। স্থূলতা ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসায় ‘সাক্সেন্ডা’ নামের ওষুধ তৈরি করেছে। এই ওষুধ ব্যবহারে ৮ থেকে ১২ শতাংশ স্থূলতা কমে।
স্থূল মানুষের ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। যাদের ডায়াবেটিস নেই অথচ স্থূল, মূলত তাদের জন্য সাক্সেন্ডা। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের আগে ওষুধটি পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন নভো নরডিস্কের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
৯০ বছরের বেশি সময় ধরে নভো নরডিস্ক ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন পণ্য উদ্ভাবনে বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার কর্মী নিয়ে ৭৫টি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে এই বহুজাতিক কোম্পানি। ১৮০টি দেশে এর পণ্য বিক্রি হয়। বাংলাদেশে এসকে-এফ এই বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ইনসুলিন তৈরি করে এবং ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন তা দেশব্যাপী সরবরাহ করে।
নভো নরডিস্কের এই কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক প্রবণতা হচ্ছে শহরে মানুষ বাড়ছে। ভালো আয়ের জন্য, ভালো শিক্ষার জন্য, ভালো কাজের জন্য, ভালো খাওয়ার জন্য মানুষ শহরে আসে। শহরের মানুষের জীবনচর্চা বা লাইফস্টাইল ভিন্ন। আর শহরেই ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেশি।
প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলোচনায় পিটার উলভস্কজোল্ড বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে যৌথভাবে কাজ করার নজির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন ক্লিনিক, এন্ড্রোক্রাইনোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ একসঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে, পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করছে। এই যৌথ উদ্যোগ অন্য দেশের জন্যও অনুকরণীয়।
বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে ভালো করছে বলে মন্তব্য করেন পিটার উলভস্কজোল্ড। তবে ইনসুলিনজাতীয় পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার ওপর জোর দেন তিনি। উৎপাদনক্ষেত্র হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নির্ধারিত মানসম্পন্ন। নির্মল পানি ব্যবহারের বিকল্প নেই। আর প্রযোজ্য সর্বক্ষেত্রে ‘কোল্ড চেইন’ বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, বড় কথা হচ্ছে—মানসম্পন্ন পণ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। মানুষের হাতে যদি নিম্নমানের ওষুধ যায়, তাহলে ফল খারাপ হতে পারে।