শ্রমিকদের জন্য ভবিষ্য তহবিল করছে সরকার

কোনো শ্রমিক মাসে ১০০ বা ২০০ টাকার ভবিষ্য তহবিল হিসাব পরিচালনা করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। আবার কোনো শ্রমিক মাসে ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকার ভবিষ্য তহবিল হিসাব পরিচালনা করলে ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে মাসে ২৫০ টাকা দেওয়া হবে। ভবিষ্য তহবিলের মেয়াদ হবে ন্যূনতম ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত।
এমন বিধান রেখে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল করছে সরকার। ইতিমধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী মাসে ভবিষ্য তহবিল বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস্) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্য তহবিল করার উদ্যোগটি ভালো। শিগগিরই শ্রমিকদের কাছে বার্তাটি যথাযথভাবে পৌঁছানো গেলে এটি সফল হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্য তহবিল করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত আগ্রহী শ্রমিকদের ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানে মাসিক ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জমা রাখার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল হিসাব খুলতে হবে। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে। কোনো শ্রমিক নিয়মিত ১০০ টাকা হারে জমা দিলে পাঁচ বছরে তাঁর ভবিষ্য তহবিলে ৬ হাজার টাকা হবে। তবে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ায় মোট ১২ হাজার টাকা পাবেন হিসাব পরিচালনাকারী সেই শ্রমিক। একইভাবে কোনো শ্রমিক মাসে ২০০ টাকা হিসাবে জমা দিলে পাঁচ বছরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা হিসাবে জমা দিলে পাঁচ বছরে ফাউন্ডেশন থেকে ১৫ হাজার টাকা মিলবে।

>অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল, মাসে ১০০ বা ২০০ টাকার হিসাব পরিচালনা করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল দেবে সমপরিমাণ অর্থ, তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত

এ ছাড়া ভবিষ্য তহবিলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে অতিরিক্ত প্রণোদনা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ৫ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হবে। ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে মুনাফা সাড়ে ৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে ১০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে। আর ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে সাড়ে ১২ শংতাশ মুনাফা পাওয়া যাবে।
শ্রমিকেরা সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার পর তাঁকে হিসাবের বিপরীতে একটি ক্যাশ কার্ড দেওয়া হবে। প্রতিবছর ভবিষ্য তহবিলের মুনাফা সেই কার্ডে জমা হবে। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলে কোনো শ্রমিক কার্ডের অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না। ভবিষ্য তহবিল হিসাব খোলার তিন বছর পর কোনো শ্রমিক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ফাউন্ডেশন থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পাবেন। আবার হিসাবধারী কোনো নারী শ্রমিক গর্ভবতী হলে পাবেন ২৫ হাজার টাকা। অবশ্য দুবারের জন্য সুবিধাটি মিলবে।
জানতে চাইলে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার গতকাল সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্য তহবিলের নীতিমালা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আগামী মাসেই এটি চালু করতে চাই আমরা। বর্তমানে সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডাক বিভাগকে নিযুক্ত করতে আলাপ-আলোচনা চলছে। কারণ সারা দেশেই পোস্ট অফিস আছে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই ওনার সামনেই ডাক বিভাগের সঙ্গে এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) সম্পন্ন করব।’
মিকাইল শিপার বলেন, ‘প্রথম বছরে আমরা ১ লাখ শ্রমিককে ভবিষ্য তহবিলের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। পরে সেটি ধারাবাহিকভাবে বাড়বে। তহবিলে শ্রমিকের পক্ষে মালিকেরা অংশ নেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৭৬ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের।
অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতের শ্রমিকেরা ভবিষ্য তহবিলের সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন। উৎপাদন খাতের মধ্যে কৃষিশ্রমিক, বর্গাচাষি, মৌসুমি শ্রমিক, কামার, কুমার, তাঁতি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতের শ্রমিক, বনায়ন ও নার্সারি কাজে নিয়োজিত শ্রমিক, বাঁশ-বেতের কারিগর, ঠোঙা ও বুক বাইন্ডিং শ্রমিক আছেন। নির্মাণ খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্মাণশ্রমিক, মাটিকাটার শ্রমিক, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। সেবা খাতের মধ্যে গৃহকর্মী, মালি, হকার ও ফেরিওয়ালা, প্রহরী, দরজি, সেলুন কর্মচারী, বেকারিশ্রমিক, দোকানশ্রমিক, নৌকার মাঝি, হাট ও ঘাটশ্রমিক, ছাতার কারিগর, রিকশা বা ভ্যান বা ঠেলাগাড়ির শ্রমিক, সুইপার, দিনমজুর, চাতাল ও হোটেলের শ্রমিক, হাসপাতালের আয়া, ডেকোরেটরের কর্মীসহ অনেকে আছেন। ভবিষ্য তহবিলের হিসাব খোলার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র কিংবা সুপারিশের প্রয়োজন হতে পারে।