আশা অনেক বেশি ছিল

আবুল কাসেম খান
আবুল কাসেম খান

আমি বলব এটা ধারাবাহিক একটা বাজেট। এখানে তেমন আকর্ষণীয় কোনো কিছু খুঁজে পাইনি। বিশেষ করে করপোরেট কর হার ও বিনিয়োগ খাতে আমাদের আশা আরও বেশি ছিল।
বাজেটের আকার প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও বেড়েছে। এডিপি আমাদের আগ্রহের মূল জায়গা। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ৪০ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে ও গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে নতুন ১০৮টি রিগ স্থাপনে বরাদ্দ ৯৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। রেল খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে ৪০ শতাংশ ও সড়ক খাতে ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। সব মিলিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তাই অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটি ডিসিসিআই বারবারই বলে এসেছে কারণ অবকাঠামো যদি উন্নত ও আধুনিক না হয় তাহলে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ একবারে ৫-৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কঠিন। গতবার জিডিপির হিসাবে অবকাঠামোতে বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, এবার সেটি বেড়ে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকার এতে গুরুত্ব দিচ্ছে, গুরুত্ব আরও বাড়ানো উচিত। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এ ক্ষেত্রে কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দরকার।
গত বছর মোট বাজেটের ৩৩ শতাংশ ছিল এডিপি, এবার সেটা ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আলাদা তদারকি বিভাগ করার যে কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সেটি ভালো উদ্যোগ। এটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে। ব্যবসা করার পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, বাজেটে আমরা এর বিশ্লেষণ চাই। একসঙ্গে পাঁচ বছরের লক্ষ্য ঠিক না করে এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর লক্ষ্য ঠিক করা হলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জিডিপি ও বিনিয়োগের অনুপাত হওয়া উচিত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ, যেটা এখন ২৯ শতাংশে আছে। এটি বৃদ্ধি করার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে তৈরি করতে হবে। এগুলোর কাজ এগিয়ে নিতে যে সমস্যাগুলো আছে, সেসব বাধা দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) যখন আসবে, তখন সেটার দাম যাতে নাগালের বাইরে চলে না যায় সে জন্য অর্থমন্ত্রী ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেছেন, এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডাবল ট্রাক করার উদ্যোগকে আমরা সমর্থন করি। অবকাঠামো উন্নয়নে এমন যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাতে সময়মতো বাস্তবায়িত হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের খরচ যাতে অতিরিক্ত না বাড়ে, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের ব্যাপারে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের কথা বাজেটের আগে ঢাকা চেম্বার বলেছিল, সেটার কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হলে সেটি বিনিয়োগের নতুন সুযোগ বাধাগ্রস্ত করবে। একবার যদি আমরা সুযোগ হারাই, সেটি কিন্তু আর ফিরে আসবে না।
করপোরেট কর ও ব্যক্তি পর্যায়ের আয়করের ব্যাপারে যতগুলো প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম, একটাও রাখা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা হতাশ। কারণ কর কমালেই মানুষের বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়ে। আমার কাছে বেশি টাকা থাকলে হয় কিছু কিনব, না হয় বিনিয়োগ করব। জিডিপি বিনিয়োগের অনুপাত ৩২ শতাংশে নিতে হলে কর হার কমানো একটি বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে। যেসব দেশে বেশি বিনিয়োগ হয়, সেখানে কর হার দেখা যায় খুবই কম। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার করতে অনুরোধ করছি। ব্যক্তি পর্যায়ে না হলেও অন্তত করপোরেট কর হারে যেন ছাড় দেওয়া হয়।
যেসব করপোরেট কোম্পানি মুনাফার অর্থ বিনিয়োগ করবে তাদের ৫ শতাংশ কর অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে একজন ব্যবসায়ী নতুন গাড়ি না কিনে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। একইভাবে একটি প্রতিষ্ঠান মোট বার্ষিক আয়ের আড়াই শতাংশ যদি গবেষণায় ব্যয় করে, তাহলে ওই অর্থকে সম্পূর্ণ করমুক্ত করা যেতে পারে। ব্যবসার উন্নয়নে মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)