এবার বাড়ল মসলার দাম

ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানীর বাজারে বেড়ে গেল মসলার দাম। বেশি চাহিদার তিনটি মসলা জিরা, এলাচি ও দারুচিনির দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে যে জিরা কিছুদিন আগেও ৩৮০ টাকা দরে পাওয়া যেত, সেটা এখন ৪৫০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

চাল, চিনি, লবণ, রসুন, মাছ ও মাংসের চড়া দামের মধ্যে এবার ঈদে মসলা কিনতেও বাড়তি ব্যয় করতে হবে ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে মসলার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দুটি। একদিকে বাজেটে সরকার মসলা আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারদরও বেড়েছে।

সংসারে পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি মসলা যতটা লাগে, জিরা, এলাচি ততটা প্রয়োজন হয় না। তবে ঈদ এলে যেহেতু সব পরিবারেই ভালো খাবার রান্না হয়, সেহেতু সবাইকেই মসলা কিনতে হয়।

সীমিত আয়ের মানুষ সাধারণত গরমমসলা নামে পরিচিত এসব মসলা কেনে ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম করে।

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এখন মানভেদে প্রতি ১০০ গ্রাম জিরার দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। এতে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। রোজা শুরুর আগে এসব জিরার দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কম ছিল বলে দাবি বিক্রেতাদের। দেশে এখন জিরা আমদানি হচ্ছে ভারত ও সিরিয়া থেকে। বাজেট ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারে ভারতীয় জিরার দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা, সিরিয়ার জিরা ২৫-৩০ টাকা বেড়ে ৩৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সুজন বলেন, কিছুদিন আগেও জিরা কেনা যেত কেজিপ্রতি ৩৩০ টাকা দরে, এরপর সেটা ৩৫০ টাকা হলো। এখন কিনতে হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজি দরে। এলাচির দাম কেজিতে ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

পাইকারি বাজারে প্রায় ১৫ ধরনের এলাচি বিক্রি হয়। তবে সাধারণ বাজারে যেসব এলাচি বেশি বিক্রি হয় তার দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে। পাইকারি বাজারে এসব এলাচির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে খুচরা বাজারে ১০০ গ্রাম এলাচিতে গ্রাহককে ২০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

এ ছাড়া কিশমিশের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ও দারুচিনি কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। তবে গোলমরিচ, লবঙ্গসহ অন্যান্য মসলার দামে হেরফের হয়নি। অবশ্য মসলার দামে খুচরা ও পাইকারি বাজারের পার্থক্য অনেক। এসব পণ্য যেহেতু খুব কম পরিমাণে বিক্রি হয়, সেহেতু খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে মুনাফা বেশি করার প্রবণতা রয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি মসলা আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছেন, অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন। সার্বিকভাবে কর ভার কিছুটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কর কাঠামোর কারণে এক কেজি জিরায় ১৩ টাকা, এলাচিতে ৫৭-৫৮ টাকা ও গোলমরিচে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কর বেড়েছে। তিনি বলেন, একে তো সরকার কর বাড়িয়েছে, অন্যদিকে আমদানি মূল্যও বেশি। এ কারণেই এসব মসলার দাম বেড়েছে।

৩৫০ টাকার এক কেজি জিরায় ১০৩ টাকাই কর দিতে হয় উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘সরকার মসলাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে গণ্য করে। এতে এত কর থাকা উচিত নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে কর কমানোর কথা বলছি, কিন্তু এবার বাড়ানো হলো। এতে জিরা ও এলাচির চোরাচালান আরও বাড়বে।’

রাজধানীর বাজারে এখন পেঁয়াজ বেশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিদেশি রসুনের দাম চড়া। চীনা রসুন ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আমদানি হওয়া ভারতীয় রসুন মিলছে ২৫০ টাকা কেজিতে। দেশীয় রসুন ১২০-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

চাল, ছোলা, লবণ ও চিনির বাজার আগের মতোই চড়া। তবে কমে গেছে বেগুন ও শসার দাম। এক কেজি লম্বা বেগুন এখন ৫০ টাকা ও শসা ৩০-৩৫ টাকার মধ্যেই মিলছে। কাঁচা মরিচ কারওয়ান বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজির মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।