স্যামসাং টিভির প্যানেল তৈরির কারখানা করেছে ট্রান্সকম

রাজধানীর মহাখালীতে গতকাল স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশনের প্যানেল তৈরির কারখানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ট্রান্সকম গ্রুপ ও স্যামসাংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা l প্রথম আলো
রাজধানীর মহাখালীতে গতকাল স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশনের প্যানেল তৈরির কারখানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ট্রান্সকম গ্রুপ ও স্যামসাংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা l প্রথম আলো

বাংলাদেশে বিশ্বখ্যাত স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশনের প্যানেল তৈরি ও সংযোজন কারখানা করেছে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস। কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংয়ের ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেলিভিশনের প্যানেল তৈরি করা হবে। আগে এই প্যানেল সরাসরি বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হতো। এখন থেকে তা বাংলাদেশেই তৈরি হবে। এলইডি টেলিভিশনের পর্দার অংশটিকে প্যানেল বলা হয়ে থাকে।

রাজধানীর মহাখালীতে ট্রান্সকম গ্রুপের কারখানা ভবন এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারখানার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, বাংলাদেশের বাজারের জন্য প্যানেল তৈরি এবং আমদানি করা অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে সংযোজনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ স্যামসাং টেলিভিশন তৈরি ও বাজারজাত করবে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস। পণ্যের মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে স্যামসাং। ভিয়েতনাম থেকে প্রয়োজনীয় সব উপাদান আনা হবে। কারখানাটিতে স্যামসাংয়ের কোরিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে এ কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, কারখানাটি স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের বাজারে স্যামসাং টেলিভিশনের বাজার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। ফলে ক্রেতারাও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন।

স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের বৈশ্বিক বাণিজ্যের দলনেতা (গ্রুপ লিডার) কুইউন চইসহ শীর্ষপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন এ কারখানার উদ্বোধন করেন ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সাইফুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্যামসাংয়ের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস বিভাগের প্রধান তায়হো পার্ক, স্যামসাং বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্যাংওয়ান ইউন, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের হেড অব বিজনেস ঈয়ামিন শরীফ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ট্রান্সকম গ্রুপ সব সময় সেরা ব্র্যান্ডের সেরা পণ্য গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। ট্রান্সকম পণ্যের মানের ক্ষেত্রেও আপসহীন। এ কারণে বিশ্বের সেরা অনেক ব্র্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে ট্রান্সকম।

স্যামসাংয়ের তায়হো পার্ক বলেন, এ কারখানাটি এশিয়ায় স্যামসাংয়ের ষষ্ঠ টেলিভিশন প্রস্তুতকারী কারখানা। তবে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে মিলে এশিয়ায় স্থাপন করা এটিই প্রথম কারখানা।

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের ঈয়ামিন শরীফ চৌধুরী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে স্যামসাং টেলিভিশন সংযোজনের ফলে ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে তাঁদের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। ক্রেতাদের কথা ভেবেই এ কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্যামসাংয়ের কুইউন চই বলেন, টেলিভিশনের বাজারে বিশ্বজুড়ে স্যামসাং শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সেই টেলিভিশন এখন থেকে বাংলাদেশে প্রস্তুত হবে—এটা এ দেশের জন্য একটি বড় সুসংবাদ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন এ কারখানায় প্রতিদিন ৫০০টি টিভি প্যানেল এবং ৩০০টি পরিপূর্ণ টেলিভিশন সংযোজন করা হবে। বর্তমানে ১০০ জন প্রকৌশলী কারখানাটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আগামী দিনে কারখানাটিতে নতুন আরও কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ রয়েছে।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে অতিথিরা কারখানাটি ঘুরে দেখেন।

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাকিল চৌধুরী জানান, ২০১০ সাল থেকে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসিসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারজাত করছে ট্রান্সকম। পরবর্তী সময়ে ফ্রিজ, এসি ও টেলিভিশন সংযোজন করার কাজ শুরু করে। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে টেলিভিশন প্যানেল তৈরির কারখানা।

ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে স্যামসাংয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ১৯৭৪ সালে প্রথম কোম্পানিটি সাদাকালো টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করে। পরে একের পর এক ইলেকট্রনিক পণ্য যুক্ত হতে থাকে কোম্পানিটির হিসাবের খাতায়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিকস বাজারে স্যামসাং ব্র্যান্ড শীর্ষে রয়েছে। কোম্পানিটির ২০টির বেশি অংশীদারভিত্তিক উৎপাদন মডেল রয়েছে।