বিদ্যমান ভ্যাট আইন বহাল রাখায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) বিদ্যমান মূসক বা ভ্যাট আইন আরও দুই বছরের জন্য বলবৎ রাখায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ১-৫ লাখ টাকার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা এবং ৫-১০ লাখ টাকার বেলায় তা ৫০০ টাকা নির্ধারণ করায় সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে।

জাতীয় সংসদে গত বুধবার পাস হওয়া অর্থবিলের ওপর এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এই ব্যবসায়ী সংগঠন। সংবাদমাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা চেম্বার বলেছে, প্রস্তাবিত ১৫% ভ্যাটের পরিবর্তে অর্থবিলে আগের ভ্যাট আইন বহাল রাখায় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমবে।

সংগঠনটি বলেছে, বর্তমানে ২০টি সেবা খাত স্তরভিত্তিক মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) সুবিধা এবং ১৭৯টি পণ্য ট্যারিফ ভ্যালু সুবিধার আওতায় রয়েছে। তাই বিদ্যমান ভ্যাট বা মূসক আইন বহাল রাখায় নির্মাণসামগ্রী, বিস্কুট, জুস, মসলা, পরিবহন, অ্যাপার্টমেন্ট, আসবাবপত্র, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, বিদ্যুৎ এবং রেস্তোরাঁ প্রভৃতি খাতের পণ্যসেবার দাম বাড়বে না। পাশাপাশি ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক হ্রাস করায় দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের জনগণ সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে বিশেষ করে এসএমই খাত মূলধন সংগঠনে আস্থা ফিরে পাবে, যা কিনা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

তবে পাসকৃত অর্থবিলে করপোরেট করের হার অপরিবর্তিত রাখায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমার পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণ কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও মনে করে ডিসিসিআই। 

সংগঠনটির মতে, উন্নয়ন-সহায়ক সংশোধনী আনার ফলে পাসকৃত অর্থবিলটি দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগকেও বেগবান করবে, যা আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

গত ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থার পরিবর্তে সব পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ এবং ব্যাংকে জমাকৃত টাকার ওপর আবগারি শুল্ক প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলায় তা সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সমাজে হতাশা তৈরি করে। তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ দেশবাসীর কথা বিবেচনায় নিয়ে সংসদে অর্থবিল সংশোধিত আকারে পাস করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার।

অর্থবিলের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে ঢাকা চেম্বার বলেছে, তৈরি পোশাকশিল্পে করপোরেট করের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশে নির্ধারণ এবং পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে এই হার ১৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনায় এ খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। এটি দেশের ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

ঢাকা চেম্বার দেশে সংযোজিত মোটরসাইকেলের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতে এই খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তারা আরও উৎসাহিত হবেন এবং বিনিয়োগ বাড়বে। দেশে সংযোজিত রেফ্রিজারেটর শিল্পের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করায় আমদানি বিকল্প এ শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। 

ডিসিসিআই বলেছে, বাজেট প্রস্তাবে সোলার প্যানেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হলেও পাসকৃত অর্থবিলে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতাকে উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।