লাভ ব্যবসায়ীর, ক্ষতি বাজেটের

জাহিদ হোসেন
জাহিদ হোসেন

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এর মূল কারণ হলো, ব্যবসায়ীরা সাড়া দিচ্ছেন না। নতুন আইনটি ‘ভালো’ বলা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন স্থগিত করা হয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন আইনটি চাপিয়ে দিতে চায়নি। তাঁদের অসন্তুষ্ট করে ঝুঁকি নিতে চায়নি সরকার। এতে লাভ হলো ব্যবসায়ীদের, আর ক্ষতি হলো বাজেটের।

প্রশ্ন হলো কীভাবে বাজেটের ক্ষতি হলো। সরকার একটি উচ্চাভিলাষী খরচের পরিকল্পনা করে বাজেট দিয়েছে।

কর আহরণের মাধ্যমেই উচ্চাভিলাষী খরচের জোগান দেওয়া হবে। এ জন্যই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। নতুন আইন হলে দুর্নীতি কমবে, স্বচ্ছতা বাড়বে; তেমনি রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। এই বাজেটের প্রধান আকর্ষণ ভ্যাট আইনটি শেষ পর্যন্ত হলো না। কিন্তু রাজস্ব লক্ষ্য কমানো হয়নি। তাই খরচের জোগান দিতে রাজস্ব লক্ষ্য অর্জনই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এখানে ভ্যাটের অংশ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২২-২৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করেই এই বাড়তি অর্থ আহরণের কথা ছিল। যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন হচ্ছে না, তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিকল্প খুঁজতে হবে। যেমন কর প্রদানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি; কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি; কর জাল বিস্তৃত করা ইত্যাদি।

অন্যদিকে সরকার অনেক ক্ষেত্রেই খরচ বাড়িয়ে ফেলেছে। বেতন-ভাতা, পেনশন, সুদ—এসব খাতে সরকারের খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এগুলো অবধারিত খরচ। আবার উন্নয়ন প্রকল্পেও খরচ করতে হবে। নতুন ভ্যাট আইন না হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণে টান পড়বে। বাজেটের ঘাটতি বাড়বে। হয়তো এক বছর ঋণ করে বাজেটের ঘাটতি মেটানো সম্ভব। কিন্তু প্রতিবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও ব্যাংকঋণ করে বাজেটের এমন ঘাটতি মেটানো হলে অর্থনীতির কাঠামোর ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।

যেহেতু অবধারিত খরচগুলো করতেই হবে। আবার কাঙ্ক্ষিত আয় না হলে খরচ সাশ্রয় করতেই হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ছোট ও তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে খরচ সাশ্রয় করা যেতে পারে।

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মতো বড় সংস্কারে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেল সরকার। এতে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়ে গেল। ভবিষ্যতে শুল্ক আইন এবং আয়কর আইন আসছে। তখনো এমন সমস্যা হতে পারে।

নতুন আইনটিই ছিল এবারের বাজেটের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। শেষ পর্যন্ত এটি হয়নি। তাই বাজেটে বড় কোনো পদক্ষেপ নেই, আছে শুধু কিছু অঙ্গীকার। অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম হলো বিনিয়োগে ওয়ান স্টপ সার্ভিস; প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ৮০ শতাংশ কেনাকাটা; প্রকল্প পরিচালকদের তালিকা প্রণয়ন। শেষ পর্যন্ত একটি সংস্কারবিহীন বাজেট পাওয়া গেল।