টাকা জোগাড়েই বেশি দুশ্চিন্তা

শুরু হলো আরেকটি নতুন অর্থবছর। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এবার বিশাল বাজেট জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। আজ (শনিবার) থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের চাপে শেষ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে বিশাল খরচের চাপ; অন্যদিকে বড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য। নতুন ভ্যাট আইনটি কার্যকর করতে না পারায় আগামী বছর রাজস্ব আহরণে অর্থমন্ত্রীকে বেশ ভুগতে হবে।
চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সরকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা খরচ করবে বলে পরিকল্পনা করেছে। এটাই সরকারের বাজেট। এর মধ্যে দেশের মানুষ জোগান দেবেন ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। সারা বছর শুল্ক, কর, মাশুল, সেবা ফিসহ বিভিন্নভাবে এই অর্থের জোগান দেবেন তাঁরা। দেশের মানুষের কাছ থেকেই বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি আসবে। জনগণের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করে সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন হয়নি, তাই কর আহরণে করদাতারাই বেশি চাপে থাকবেন। বাজেটের বাকি (অনুদানসহ) ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা সরকার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করে মেটাবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাস করা বাজেটটি সার্বিকভাবে অবাস্তব ও উচ্চাভিলাষী। প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের শেষ দিকে এসে কাটছাঁট করতেই হবে। নতুন ভ্যাট আইন না হওয়ায় এবার বেশি কাটছাঁট করতে হবে।
তাঁর মতে, ভ্যাট আইন না হওয়ায় যে রাজস্ব আহরণ কম হবে, তা কিছুটা পূরণ করতে কর ও ভ্যাট দেন না, কিন্তু কর ও ভ্যাটযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করজালে আনা উচিত।
আয়: বাজেটের অর্থ জোগানের প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হলো এনবিআর। বিশাল লক্ষ্যকে তাড়া করতে গিয়ে এবার এনবিআরকে বেশ ভুগতে হবে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্য নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে ধরেই হিসাব করা হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের। সেই লক্ষ্য যদি পূরণও করে এনবিআর—তবু নতুন অর্থবছরে ৬৩ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি লাগবে ৩৪ শতাংশ। এমন প্রবৃদ্ধি কখনোই অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। পুরোনো আইন, পুরোনো জনবল অর্থাৎ পুরোনো সৈন্য-সামন্ত দিয়েই এই শুল্ক-কর আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

 শুরু হলো নতুন অর্থবছর


নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা থাকায় এবার আয়করে তেমন পরিবর্তন করা হয়নি। নতুন কর বসানো হয়নি; তবে কর ছাড় আছে। বেশি পরিবর্তন এসেছে আয়কর বিবরণী দেওয়ার নিয়মে।
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষ চাপে থাকবেন। বিদায়ী অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের মতো হয়েছে। এ জন্য বাড়তি টাকা খরচ করার পরও সীমিত আয়ের ছোট করদাতাদের আগের মতোই এবারও একই হারে কর দিতে হবে। আবার যাঁরা গতবার আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি গিয়ে করজালের বাইরে ছিলেন, কিন্তু এবার বেতন–ভাতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই সীমা পেরিয়ে গেছেন—এবার তাঁরা করজালে আটকে যাবেন। এটি একটি ফাঁদের মতো।
বেসরকারি চাকরিজীবীরাও বিপাকে পড়বেন এবার। গতবার বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এবারের বাজেটে ব্যবসা বা পেশার নির্বাহীদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওই সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের রিটার্ন দিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতেই হবে। আবার ২৫ লাখ টাকার কম সম্পদ থাকলে সম্পদ বিবরণী দেওয়া ঐচ্ছিক করা হয়েছে। এত দিন ছিল ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক বড়লোকদের আয়করের ওপর সারচার্জ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল ব্যবসায়ীদের আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ সারচার্জ বসানো হয়েছে। আয়ের ওপর কর বসে, সারচার্জ বসানো কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।