বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে তাই আগেভাগেই সংশোধন

আবুল মাল আবদুল মুহিত
আবুল মাল আবদুল মুহিত

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন কার্যকর না হওয়ায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটের সংশোধনও তাই এবার আগেভাগে করবেন বলে জানান তিনি।

নতুন আইনের আওতায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার ধরে চলতি অর্থবছরের বাজেটটি তৈরি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই আইন কার্যকরের সময় দুই বছর পিছিয়ে যায়।

অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ে গত শনিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়া পিছিয়ে গেলেও বাজেটের আকারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সে জন্য এবারের সংশোধিত বাজেট অন্যবারের তুলনায় আগেই দেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বাজেট ও ভ্যাট প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে, তাই বাজেটের কিছু পরিসংখ্যান (ফিগার) বদলাতে হবে।

নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় ভ্যাট থেকে বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের চিন্তা ছিল সরকারের।

রাজস্ব আহরণের উৎসে কিছু পরিবর্তন আসবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বিষয়ে আমি খুশি হব, খুশি হয়েই আছি মনে মনে। সেটা হচ্ছে আয়কর এবং করপোরেট কর থেকে এবার ভালো আদায় হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিবার হুবহু পাস হয় না। যথেষ্ট পরিবর্তন হয়। এবার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন যেহেতু পিছিয়ে গেল, তাই পরিবর্তনটাকে বড় মনে হলো।

এই পিছিয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় হলো কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, ‘প্রতিশ্রুতির কিছু নেই। আমরা সবাইকে বলেছি। সারা দুনিয়াকে বলেছি যে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করব। আগে অবশ্য কার্যকরের কথা বলেছিলাম ২০১৬ সালের জুলাই থেকে। পারিনি নিজস্ব বাস্তবতায়।’

আইএমএফ কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো জানায়নি, নিশ্চয়ই জানাবে। বিশ্বব্যাংক সংক্ষিপ্ত মন্তব্য (সামারি কমেন্ট) করেছে। বাজেটের পরে বিশ্বব্যাংক প্রতিবারই বিশ্লেষণ করে জানায় যে এ বিষয়ে আশা পূরণ হয়েছে, এই বিষয়ে হয়নি ইত্যাদি।’

নতুন বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হলেও তা এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সঞ্চয়পত্রের সুদ হার

সাংসদেরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সরকারি পরিকল্পনার বিপক্ষে সংসদে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সে বিষয়ে কী করবেন—জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক হবে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যাতে পেনশনভোগী এবং মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

অর্থমন্ত্রী অবশ্য এ-ও বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সাধারণত ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি রাখা হয়। তবে এত বেশি রাখা উচিত নয়। ব্যাংকের সুদের হার যেখানে ৭ শতাংশ, সেখানে সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ব্যাপারে অর্থসচিবের কিছু চিন্তা আছে।

অর্থসচিব তখন বলেন, ‘যাঁদের উদ্দেশে সঞ্চয়পত্র, তাঁরাই যাতে এর সুবিধাটা পান, সেটা নিশ্চিত করা হবে। ১৭ হাজার আউটলেট থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। তদারক করা কঠিন।’

সঞ্চয়পত্র কেনার পরিমাণ ও সুদের হার নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভালো প্রস্তাব।’

পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গ

অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে দেশের অর্থনীতির নানা দিকসহ পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলছিলেন। সচিবদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান দেশটা অনেক ভালো ছিল একসময়। ১৯৬২ সালে কোরিয়ার একটি দল এসেছিল পাকিস্তানে। এসেছিল দেশটি কীভাবে এত ভালো করছে, তা দেখতে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তান একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দেশটি খারাপ হওয়ার আরেক কারণ হচ্ছে সেনাশাসন।

অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন তখন বলেন, ‘তারা প্রথমে গুলি করে, তারপর আবার তদন্ত করে।’

শ্রীলঙ্কার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশটিকে শেষ করে দিয়েছে রাজাপক্ষে (বর্তমান রাষ্ট্রপতি মাইথ্রিপালা সিরিসেনার আগের রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষে)। এত ছোট অর্থনীতির দেশ, অথচ এর ঋণের পরিমাণ (ডেট) বাংলাদেশের চেয়েও বেশি।