লবণে ৪৫০ কোটি টাকা বাণিজ্যের আয়োজন

২৩২টি পরিশোধনকারী মিলকে ৫ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমতি দিল আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। এতে ছোট-বড় সব মিল গড়ে ২ হাজার ১৫৫ টন লবণ আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

বড় মিলগুলো বলছে, এ পরিমাণ লবণ তাদের কয়েক দিনের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। অন্যদিকে বেশির ভাগ মিলের মালিক লবণ আমদানি করে বড় মিলের কাছে চড়া দরে বিক্রি করে দেবেন। এতে বাজারে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।

আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার অনুমতি পাওয়া মিলের তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সচল মিলের তালিকার বাইরেও ৩৯টি মিল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। বিসিক সারা দেশে সরেজমিনে তদারক করে ১৯৩টি মিলকে সচল হিসেবে উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে তালিকা দিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ভারত থেকে লবণ আমদানিতে মিলগেটে প্রতি কেজির খরচ পড়ে ৫ টাকার মতো। বাজারে এখন অপরিশোধিত লবণের দাম ১৪ টাকা। ফলে আমদানির সুযোগ পাওয়া মিলগুলো বড় মিলের কাছে বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে ৯ টাকা লাভ হবে। বাজারে দাম না কমলে ৫ লাখ টন লবণের ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি বেরিয়ে যাবে ৪৫০ কোটি টাকা।

২ হাজার ১৫৫ টন লবণ দিয়ে মোল্লা সল্টের কারখানা চালানো যাবে এক সপ্তাহ। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘এভাবে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় জনগণের কোনো উপকার হবে না। উপকার হবে কিছু ট্রেডারের, যারা আমদানি করে বিক্রি করে দেবে। আমরা বেশি দামে কিনব, বেশি দামে বিক্রি করব।’

ঢাকার বাজারে এখন সবচেয়ে ভালো মানের লবণের দাম ৩৮-৪০ টাকা, দুই বছর আগেও যা ২৫ টাকা ছিল। বাজার সামাল দিতে গত বছরও সরকার আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু আমদানি করার পর পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ার বদলে বেশির ভাগ মিল সেগুলো বড় মিলের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে বাজারে দাম কমেনি, ভোক্তারাও সুফল পায়নি।

এবার বড় মিলের মালিকেরা আয়োডিন ব্যবহারের অনুপাত অনুযায়ী আমদানির অনুমতি চেয়েছিলেন।

এ বিষয়ে এসিআই কনজ্যুমার প্রডাক্টসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘যে পরিমাণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে আমাদের মিল চার দিন চলবে। এরপরে অন্যদের কাছ থেকে কিনতে হবে। ওরা দ্বিগুণ দামে বেচবে।’

পূবালী সল্টের চেয়ারম্যান পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, বাজারে দাম এক টাকাও কমবে না। সরকারের নীতিই ভুল।