৩ স্থলবন্দরে চালভর্তি ট্রাকজট

চাল আমদানিতে শুল্ক হার কমানো হতে পারে—এমন খবরে দেশের তিন স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি কমে গেছে। আমদানি করলেও অনেকে চালবোঝাই ট্রাক খালাস করছেন না। অনেকে আবার ওপারেও (ভারত) চালবোঝাই ট্রাক রেখে দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে দিনাজপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এবং সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চালবোঝাই প্রায় পৌনে ৫০০ ট্রাক আটকে আছে। প্রধানত এই তিন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হয়।

 আগে চাল আমদানিতে শুল্ক হার ২৮ শতাংশ ছিল। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত জুনে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। এখন আবার তা কমাতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন।

গতকাল দুপুরে দিনাজপুরের হিলি পানামা পোর্ট লিংকে দেখা গেছে অনেক চালবোঝাই ভারতীয় ট্রাক। বৃষ্টিতে ট্রাকগুলো ভিজে গেছে। পোর্ট লিংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন মল্লিক প্রতাপ প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পোর্ট লিংকে
আমদানি করা ২৭৫ ট্রাক চাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতি ট্রাকে গড়ে ৩০ মেট্রিক টন চাল রয়েছে। আমদানিকারকদের দাবি, লোকসান থেকে কিছুটা রেহাই পেতেই শুল্ক কমার আশায় চাল খালাস বন্ধ রেখেছেন।

গত জুলাই মাসে এই বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৬৮৯টি ট্রাকে ৫৭ হাজার ৪৮১ টন চাল আমদানি হয়। অথচ ১০ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

হিলি আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. হারুন উর রশিদ বলেন, আমদানিকারকেরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় শুল্ক হার কমানো হতে পারে—এমন খবরে খালাস করছেন না।

 দু-এক দিনের মধ্যে চাল খালাস না হলে বন্দরসহ হিলি শহর এলাকায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে অন্য পণ্য আমদানিতেও প্রভাব পড়বে। অবশ্য হিলি শুল্কস্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ফখরুল আমিন চৌধুরী বলেন, আমদানিকারকেরা ২১ দিন পর্যন্ত পণ্য খালাস না করার অধিকার রাখেন।

গত শুক্রবার সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে গিয়ে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

ভোমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ভোমরা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার (৯০-১২০ ট্রাক) মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার চাল আমদানি হয় মাত্র ৮২৫ মেট্রিক টন (৩৩ ট্রাক)।

শুক্রবার ভোমরা বন্দরে দেখা যায়, এখান ওখানে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, কমবেশি ৪০টির মতো চালভর্তি ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 জানা গেছে, বর্তমানে ভারতের পাশে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় চালভর্তি ৩০০-৩৫০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে চালভর্তি ভারতীয় প্রায় ১৫০টি ট্রাক এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত আটকে আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক আবদুল আওয়াল বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শিগগিরই চাল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে পারে। এ কারণেই আমদানিকারকেরা বর্তমান শুল্ক কর দিয়ে চাল ছাড় করছেন না।

{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ; কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা এবং এ এস এম আলমগীর, বিরামপুর (দিনাজপুর)}