গরম মসলার আমদানি বেড়েছে

দেশে গরম মসলার আমদানি বেড়েছে। এক বছর ধরে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, তেজপাতা—এসব মসলার দামও মোটামুটি স্থিতিশীল। সব গরম মসলার সরবরাহ বর্তমানে এক বছর আগের চেয়ে ভালো। একটি গরম মসলার সরবরাহ বরং এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরম মসলার দাম বাড়বে না। অবশ্য ব্যবসায়ীদের এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কারণও আছে—এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো গরম মসলারই দাম বাড়েনি; বরং কিছু কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি নিত্যপণ্যের আমদানি ও উৎপাদন পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে গরম মসলার আমদানিচিত্র উঠে এসেছে। দেশে কোনো গরম মসলার উৎপাদন হয় না বলে এর পুরো বাজারই আমদানিনির্ভর।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মসলা আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়নি। বাজেটে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হলেও পরে তা কার্যকর না করে আগের হারই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আমদানি শুল্ক ২৫ এবং সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশেই বহাল রয়েছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার কারণে ব্যবসায়ের অবস্থা খারাপ। ঈদ উপলক্ষে মসলার দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই, আশা করি বাড়বেও না।’

জিরা

গত২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দেশে ১৭ হাজার ৬৯২ টন জিরা আমদানি হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে তা আমদানি হয় ২১ হাজার ৬৬২ টন। জিরা আসে মূলত তুরস্ক, সিরিয়া ও ভারত থেকে। বিশ্বের মোট জিরা উৎপাদনের ৭০ শতাংশই ভারতের দখলে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল রোববার ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে জিরা বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে এই দর ছিল ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা।

দারুচিনি

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আট হাজার ৩৮৬ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৮৯ টনে।

দেশে সাধারণত ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি আমদানি হয়। এটি ১০ থেকে ১৫ মিটার লম্বা একধরনের গাছের সুগন্ধি ছাল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এই গাছের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কা।

টিসিবির গতকালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি দারুচিনির দাম ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা। এক বছর আগে দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা।

লবঙ্গ

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে দেশে ৩০৭ টন লবঙ্গ আমদানি হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে, ৬২৩ টন। লবঙ্গের আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়ায় এবং বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশই হয় এই দেশে। এর পরের উৎপাদক দেশ হচ্ছে মাদাগাস্কার ও তানজানিয়া। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে মসলাটি তৈরি হয়।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে; যা এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা।

এলাচি

 ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ১৭৪ টন এলাচি আমদানি হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়েও অবশ্য তা আমদানির পরিমাণ সমান ছিল। গুয়াতেমালা এবং ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু থেকে এলাচি আমদানি হয়ে থাকে। গুয়াতেমালা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলাচি উৎপাদক দেশ।

টিসিবি বলছে, এক বছর আগে এ মসলাটি ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।