ঘোষিত সময়ে বোনাস পাননি শ্রমিকেরা

তিন দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ প্রায় ৪০ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত ঈদ বোনাস বা উৎসব ভাতা বুঝে পাননি। যাঁরা উৎসব ভাতা পেয়েছেন, তাঁদের একটি বড় অংশই ভাতার পরিমাণ নিয়ে অসন্তুষ্ট। কারণ, শ্রমিকেরা মূল বেতনের সমপরিমাণ ভাতা দেওয়ার দাবি করলেও সেটি বাস্তবায়িত করেছেন অল্প কিছু কারখানার মালিক। বেশির ভাগ কারখানার শ্রমিকেরা ভাতা পাচ্ছেন মূল বেতনের ৪০-৬০ শতাংশ অর্থ।

একাধিক শ্রমিকনেতার অভিযোগ, শ্রমিকপক্ষের চাপ ও সরকারের উদ্যোগে প্রতি ঈদের আগেই মালিকপক্ষ বেতন-ভাতা পরিশোধের তারিখ ঘোষণা করে। তবে তদারকি না থাকায় পোশাকমালিকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো বেতন-ভাতা দেন। এ জন্য শেষ মুহূর্তে অনেক শ্রমিক বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হন।

১৬ আগস্ট পোশাকশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও শ্রম অসন্তোষ নিরসনে গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক কোর কমিটির সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। সভায় উপস্থিত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর একজন প্রতিনিধি প্রতিশ্রুতি দেন, ২৪ আগস্টের মধ্যে উৎসব ভাতা দিয়ে দেবেন মালিকেরা। গত বৃহস্পতিবার এই সময়সীমা পার হয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, সারা দেশে ৪ হাজার ৭৬৫টি (ইপিজেডের কারখানা অন্তর্ভুক্ত নয়) পোশাক কারখানা আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৯৬১টি, গাজীপুরে ১ হাজার ২৯৭টি, নারায়ণগঞ্জে ৭৩৪টি ও চট্টগ্রামে ৬৭৪টি কারখানা আছে। এসব কারখানার অধিকাংশই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য। তবে বর্তমানে কিছু কারখানা উৎপাদনে নেই।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্পকারখানার বেতন-ভাতার বিষয়টি তদারক করছে শিল্প পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ৬ হাজারের বেশি শিল্পকারখানা আছে। তার মধ্যে পোশাক কারখানা ৩ হাজার ২৭৮টি। গতকাল পর্যন্ত এসব কারখানার প্রায় ৮০ শতাংশ উৎসব ভাতা দিয়েছে। আর চট্টগ্রামের ৪৫ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জের ৬০ শতাংশ ও গাজীপুরের ৬৫ শতাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ভাতা পেয়েছেন।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নওশের আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬০-৬৫ শতাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা উৎসব ভাতা পেয়েছেন। তবে অধিকাংশ কারখানা চলতি মাসের বেতন বুধবার ও বৃহস্পতিবার দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি ঈদের আগে আগস্ট মাসের ৭০ শতাংশ বেতন দিয়ে দিতে। কেউ কেউ বলছে ৫০-৬০ শতাংশ দেবে।’

অবশ্য বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির গতকাল বিকেলে বলেন, ‘বিজিএমইএর সদস্য ৮০ শতাংশ কারখানাই ভাতা পরিশোধ করে দিয়েছে। বাকিরাও দেবে। তবে অনেক কারখানার শ্রমিকেরা চান ঈদের আগে বেতন-ভাতা একসঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হবে এমন কয়েকটি কারখানা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না।’

জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬০ শতাংশ কারখানার শ্রমিক এখন পর্যন্ত ভাতা পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, তদারকির অভাবে শ্রমিকেরা সময়মতো বেতন-ভাতা পান না। শ্রম আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন।