সিদ্ধান্তহীনতায় অলস পড়ে আছে ১২০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সামাজিক সুরক্ষা তহবিলে (এসওএফ) জমা থাকা ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা প্রায় ছয় বছর ধরে অলস পড়ে আছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে এ অর্থ খরচ করার কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে এসওএফের অর্থ খরচের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ওই বৈঠকেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী ২০১১ সালে বিটিআরসি এসওএফ গঠন করে। নিয়ম অনুযায়ী, মোবাইল ফোন অপারেটরদের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ এই তহবিলে জমা দিতে হয়। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে অপারেটররা এ তহবিলে টাকা দিতে শুরু করে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সুদসহ এ তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের শিল্প ভবন করপোরেট শাখায় এ টাকা জমা আছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ডমেস্টিক নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডিএনসিসি) ২৪তম সভায় এসওএফের ৬৫০ কোটি টাকা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের একটি প্রকল্পে খরচ করার প্রস্তাব তোলা হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, আইসিটি বিভাগের ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পে দেশের ৭৭২টি ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক অবকাঠামো তৈরির জন্য এ অর্থ চেয়েছে আইসিটি বিভাগ। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। গত বছর এ তহবিল থেকে ৬০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত বন্ধক রেখে সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের খরচের অর্থ সাময়িকভাবে পরিশোধ করেছিল বিটিআরসি।

এসওএফে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দিয়েছে গ্রামীণফোন। একই সময়ে রবি আজিয়াটা দিয়েছে ২২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আর বাংলালিংক দিয়েছে ২১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। রবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এয়ারটেল এ তহবিলে দিয়েছে ৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বর্তমানে কার্যক্রম বন্ধ থাকা অপারেটর সিটিসেল গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দিয়েছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক গত বছরের জুলাই থেকে এ তহবিলে টাকা দেওয়া শুরু করে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে অপারেটরটি দিয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসওএফ বিধিমালা অনুসারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটির সভা আগামী এক মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এসওএফের টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসাবে জমা থাকবে।

২০১১ সালে গঠিত হলেও এসওএফ তহবিলের বিধিমালা চূড়ান্ত করতেই তিন বছর লেগে যায়। ওই বিধিমালা অনুসারে তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১৪ সালে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে তহবিলের অর্থ যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে কর্মসূচি প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন, প্রকল্প পরিবীক্ষণ, বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং বার্ষিক বাজেটে এ তহবিল অনুমোদন করানো। কিন্তু আজ পর্যন্ত কমিটি কোন খাতে অর্থ খরচ করা হবে, তা ঠিক করে উঠতে পারেনি।

এসওএফ ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা হয়েছে, দেশের যেসব দুর্গম এলাকায় এখনো টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, সেসব স্থানে এ সুবিধা বিস্তৃত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসওএফের অর্থ ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলা বা ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ টেলিযোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতেও এ তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যাবে।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এসওএফের এই অর্থ দেশে টেলিযোগাযোগ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা উচিত। জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা যাতে আরও ভালো সেবা পায়, সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সেভাবেই এই অর্থ খরচে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।