ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন প্রস্তাব সংসদে, জাপার আপত্তি নাকচ

ব্যাংকে একই পরিবারের চারজনকে পরিচালক নিয়োগ এবং একটানা নয় বছর পরিচালক পদে থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব উঠেছে জাতীয় সংসদে।

আজ মঙ্গলবার সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ উত্থাপন করেন।

পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিকেল পাঁচটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, এটা অনৈতিক। একজন ব্যক্তির স্বার্থে আইন হতে পারে না। ব্যাংকে একই পরিবারের দুজন থেকে চারজন করে পরিচালক করা হলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে ফ্যামিলি ব্যাংকিং নামে দেশে ব্যাংক দেখা যাবে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। ফ্যামিলি ব্যাংক হলে অর্থনীতির আর কিছু বাকি থাকবে না। সব লুটপাট হয়ে যাবে। একমাত্র ব্যাংকের পরিচালকের আত্মীয়স্বজনেরা সুবিধা পাবে, আর কেউ পাবে না।

এই সাংসদ পরিচালকের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, এর ফলে যত দিন ব্যাংক থাকবে, তত দিন লুটপাটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনটি ১৯৯১ সালের। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এটা অকল্পনীয়। এ নতুন পরিস্থিতিতে কত টাকা বড় অঙ্ক, কত টাকা ছোট অঙ্ক, তা বদলে গেছে। আগে ব্যাংকে মূলধন লাগত ৮ কোটি এখন ৪০০ কোটি লাগে। ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, শুরু থেকে ব্যাংক পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ছিল। ব্যাংকের ব্যাপারটাই এমন যে উদ্যোক্তাদের বিশেষ ভূমিকা থাকে। আর নয় বছর একটি ব্যাংকের ইতিহাসে কিছুই না। তিনি বলেন, এই আইনের জন্য গঠন করা একটি কমিটির মতামতের পর মন্ত্রিসভায় বিলটি পাস হয়। সংসদের আগামী অধিবেশনে এই বিল নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে।

পরে ফখরুল ইমামের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিদ্যমান আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। আর তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর একই ব্যক্তি পরিচালক হতে পারেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হতে পারেন।

চলতি বছরের ৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন পায়। এরপর থেকেই ব্যাংকিং খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। অনেকে মনে করেন, এ আইন হলে বেসরকারি ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে। মূলত প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সুযোগ দিতেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো পরিবারের কেউ পৃথকভাবে ব্যবসা করলে এবং নিজেই করদাতা হলে তাঁকে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বলা যায় না। বর্তমান বিধানে একক পরিবার থেকে পরিচালক পদে নিয়োগযোগ্য সদস্যসংখ্যা দুজনে সীমিত। একক পরিবার থেকে দুজনের স্থলে চারজনকে সুযোগ দেওয়া হলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে বলে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে সংশ্লিষ্ট বিধানে পরিচালক পদের মেয়াদের ব্যাপ্তি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এই বিধান অনুযায়ী প্রথম পর্ষদের মেয়াদ এক বছর এবং প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালকের পদত্যাগের বিধান রয়েছে। ফলে পরিচালকেরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সব ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ নয় বছর পর্যন্ত পরিচালক পদে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে পরিচালকের মেয়াদসংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন কার্যকর হওয়ার পরে কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে নয় বছরের বেশি থাকতে পারবেন না।’ এতে আরও বলা হয়, ‘একাদিক্রমে নয় বছর পদে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি পরিচালক পদে পুনঃ নিযুক্তির জন্য যোগ্য হবেন না।’

এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি পরিচালক পদে তিন বছরের চেয়ে কম সময় অধিষ্ঠিত না থাকলে একাদিক্রমে নয় বছর গণনার ক্ষেত্রে উক্ত সময়েও অন্তর্ভুক্ত হবে।’