খুলনা থেকে রামপাল পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ১২০ কোটি টাকা

খুলনা মহাসড়ক থেকে বাগেরহাট জেলায় নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক উন্নয়ন ও ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের উপযোগী সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কোম্পানিটিকে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ক্রয় কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শর্ত অনুযায়ী খুলনা-মোংলা মহাসড়কের বাবুর বাড়ি সংযোগস্থল থেকে বাগেরহাট জেলায় নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করে দেবে তমা। কোম্পানিটি এ ছাড়া উভয় পাশে ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের উপযোগী সড়কও নির্মাণ করে দেবে।
দরপত্রে অংশ নিয়ে তমা কনস্ট্রাকশন, আবদুল মোনেম লিমিটেড, মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড যোগ্য (রেসপনসিভ) বিবেচিত হলেও সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় তমা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ক্রয় কমিটির বৈঠকে মোট চারটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির প্রস্তাব। প্রতি টন ৪৭০ মার্কিন ডলার দামে লন্ডনের ইডিএনএফ ম্যানসুগার এ কাজ পেয়েছে, যে কোম্পানির স্থানীয় সহযোগী রিয়া ইন্টারন্যাশনাল। এতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ২১১ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ক্রয় কমিটিকে জানায়, গত সোমবার পর্যন্ত তাদের কাছে ৪২ হাজার টন চিনির মজুত রয়েছে। এই মজুতের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ২৩ হাজার ৫০০ টন। তখন প্রকৃত মজুত দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৫০০ টন চিনি, যা বাজার নিয়ন্ত্রণসহ জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
সংস্থাটি আরও জানায়, দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে আখ উৎপাদনে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী নভেম্বর থেকে সরকারি চিনিকলগুলোতে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদিত হওয়ার কথা, তা না-ও হতে পারে। আমদানি করা চিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ মজুত হিসেবে কাজে দেবে এবং ভোক্তাদের সুলভে চিনির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। কারণ, বিএসএফআইসির মজুত কমে গেলে বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী কারখানাগুলো বিভিন্ন অজুহাতে চিনির দর বাড়িয়ে দেয়।
দেশে প্রতিবছর চিনির চাহিদা ১৪ লাখ টন। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার ঢাকার বাজারগুলোতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি বেচাকেনা হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়নাধীন ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহুরি ইরিগেশন প্রকল্পের ‘প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও নকশা পরামর্শক’ শীর্ষক একটি প্যাকেজের দর বৃদ্ধির প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বেড়ে ওই প্যাকেজের খরচ দাঁড়াবে ৫৯ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় এলজিইডিকে ডিপোজিট ওয়ার্কস হিসেবে দেওয়া কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর ওপর কস্তুরি ঘাটে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এমইএএল স্পেক্টা জয়েন্ট ভেঞ্চার ১৭২ কোটি ১২ লাখ টাকায় এটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজউকের বাস্তবায়নাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর অংশের কিছু কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার একটি প্রস্তাবও অনুমোদিত হয় গতকালের বৈঠকে। কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ ও প্লট পিলার স্থাপন। নৌবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান ৫৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় এই কাজ করবে।
ক্রয় কমিটির আগে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর জন্য সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড থেকে গার্বেজ ডাম্প ট্রাক কেনার জন্য প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। এগুলোও কেনা হবে সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে। এ ছাড়া সার সংরক্ষণের জন্য ১৩টি বাফার গুদাম নির্মাণের একটি প্রস্তাবও অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।