মুনাফার শীর্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড লোকসানের শীর্ষে সোনালী

ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ঋণ বাড়ার কারণে সুদ আয় বাড়লেও খেলাপি ঋণের কারণে মুনাফা কমে যাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংকের। ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রকৃত মুনাফায় বড় ধাক্কা লেগেছে। জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।
জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে ব্যাংক খাতে মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। আর সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ফলে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর মুনাফায়।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো আয় করেছে ১০ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। তবে খেলাপি ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৫ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে মুনাফা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকগুলো সঞ্চিতি রেখেছিল ৩ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উল্লিখিত সময়ে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এ সময়ে ব্যাংকটি ৩৩৬ কোটি টাকা প্রকৃত মুনাফা করেছে। দেশীয় ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ২৫৬ কোটি টাকা ও ব্র্যাক ব্যাংক ২৩২ কোটি টাকা প্রকৃত মুনাফা করে। এ ছাড়া দি সিটি ব্যাংক ১৬৪ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১৫৬ কোটি, ইস্টার্ণ ব্যাংক ১৫৩ কোটি ও বিদেশি খাতের এইচএসবিসি ১৩৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে ২৪৯ কোটি টাকা মুনাফা করলেও খেলাপি ঋণের কারণে দেড় হাজার কোটি টাকা সঞ্চিতি রাখতে হয়। তাতেই বড় ধরনের লোকসানে চলে যায় ব্যাংকটি।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকের আগের খেলাপি ঋণগুলো সহজেই আদায় হচ্ছে না। এ ছাড়া নতুন ঋণও সেভাবে দেওয়া হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের বিপরীতে বড় অঙ্কের অর্থ সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে লোকসান হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।’
এদিকে আলোচ্য সময়ে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও ৫১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। আর বেসরকারি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১৮ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ১৪৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কিউ এম ফোরকান প্রথম আলোকে বলেন, আগের চেয়ে ব্যাংকের অনেক উন্নতি হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংক কোনো লোকসান করেনি। বরং কিছু মুনাফা করেছে।
এদিকে নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক প্রথমবারের মতো ১৩ কোটি টাকা লোকসান করে গত জুন শেষে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ হারে সঞ্চিতি রাখায় লোকসান হয়েছে। তবে প্রকৃত লোকসান ১৩ কোটি নয়, ৪ কোটি টাকা।