হীরার বিশ্ববাজার থমকে আছে

হীরার বিশ্ববাজারে মন্দা অবস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডি বিয়ারস ২০১৬ সাল পর্যন্ত হিসাব দিয়ে এ কথা বলেছে। প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে হীরা বিক্রির বড় দুই বাজার চীন ও ভারত। দুই দেশে মন্দার কারণেই বিশ্বজুড়েই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর হীরার বাজারে সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

ডি বিয়ারসের প্রতিবেদন বলছে, দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর হীরার বিশ্ববাজারের আকার এখন ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। চীনে গত বছর হীরার বিক্রি কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, আর ভারতে কমেছে ১৩ শতাংশ। বিশ্বের মোট হীরা বিক্রির ২৩ শতাংশ হয় এই দুটি দেশে। তবে এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর হীরার বিক্রি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন এক সময়ে হীরার বাজারের মন্দার খবরটি এল, যখন পণ্যটির বিক্রি বাড়াতে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। হীরার বিক্রি বাড়াতে এ বছর ১৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে ডি বিয়ারস। ২০০৮ সালের পর বিপণনের জন্য এক বছরে এত খরচ আর করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮০–এর পর জন্ম নেওয়া মিলেনিয়াল প্রজন্মকে হীরার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিশেষ পরিকল্পনাও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। হীরার বিক্রি বাড়াতে ১৯৪০–এর দশকে ডি বিয়ারস তৈরি করেছিল ‘হীরা চিরদিনের’ শীর্ষক একটি স্লোগান, যা সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

ডি বিয়ারসের গবেষণা তথ্য বলছে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা বেশি পরিমাণে কেনায় যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর হীরার বিক্রি বেড়েছে। গত বছর দেশটিতে বিক্রি হওয়া মোট হীরার অলংকারের ৩১ শতাংশ কিনেছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানে নিজের আয় দিয়ে কিনেছেন এমন বেশির ভাগ নারী ক্রেতার বয়স ৩৫ বা তার বেশি। তাঁদের মধ্যে বিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ৫৭ শতাংশ আর মিলেনিয়ালদের সংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের অর্থে নারীদের হীরা কেনার এ প্রবণতা কাজে লাগাতে চাইছে ডি বিয়ারস। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, নারীদের অর্থনৈতিক শক্তি যত বাড়বে, হীরার বিক্রিও তত বাড়বে। কারণ, রত্ন হিসেবে নারীদের কাছে হীরার আবেদন এখনো অনেক বেশি।

ডি বিয়ার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রুস ক্লিভার এ বিষয়ে বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক শক্তি বা মুক্তি এবং ক্ষমতায়নের কারণে সারা বিশ্বে এখন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আর এই পরিবর্তনই ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে হীরার বাজারে। কারণ, হীরা কেনার জন্য নারীদের এখন অন্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। বিষয়টি এ খাতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

ডি বিয়ারসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে যত হীরা বিক্রি হয়েছে, তার ৪৭ শতাংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালে মোট বিক্রি হওয়া হীরার ৪৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছিল দেশটিতে। একক বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে আছে চীন। গত দুই বছরে বিশ্বের মোট হীরা বিক্রির ১৬ শতাংশ হয়েছে চীনে। হীরা বিক্রির একক বাজার হিসেবে তৃতীয় স্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্য। গত বছর বিশ্বে ৭ শতাংশ হীরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিক্রি হয়েছে। জাপান ও ভারতে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ ও ৫ শতাংশ। এই পাঁচটি দেশ ছাড়া সারা বিশ্বে বিক্রি হয়েছে ১৯ শতাংশ হীরা।