ফ্রাঙ্ক রিবেরির জার্সির জন্য যে বাক্স

ফরাসি ফুটবলার ফ্রাঙ্ক রিবেরির জন্য জার্মান ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের ফরমায়েশে কুমিরের কৃত্রিম চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জার্সির এই বিশেষ বাক্স l ছবি: প্রথম আলো
ফরাসি ফুটবলার ফ্রাঙ্ক রিবেরির জন্য জার্মান ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের ফরমায়েশে কুমিরের কৃত্রিম চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জার্সির এই বিশেষ বাক্স l ছবি: প্রথম আলো

ফ্রাঙ্ক রিবেরি ফ্রান্সের ফুটবলার, খেলেন জার্মান লিগে। বায়ার্ন মিউনিখ তাঁর দল। স্পনসর বা পৃষ্ঠপোষক কোম্পানি তাঁকে জার্সি দেবে। এ জন্য দুটো বিশেষ বাক্স তৈরির আদেশ পেয়েছে ফাপ্যাক।

ফাপ্যাক এখানকার একটা প্যাকেজিং কোম্পানি। কার্ডবোর্ড তাদের মূল কাঁচামাল। তবে তাদের একটা বিশেষত্ব আছে, বিশেষ কিছু বাক্স তারা হাতেই বানায়। রিবেরির জন্য জার্সির একটি বাক্সই বানাতে একজনের লেগেছে পুরো দুইটা দিন। ওপরে কুমিরের কৃত্রিম চামড়া, ভেতরে নানা কারুকাজ। একটা বাক্সের দাম পাঁচ শ ইউরো, বাংলাদেশের টাকায় ৫০ হাজার টাকার কিছু কম।

জার্মানির বার্লিনে পুরো একটা দিন কাটল নানা ধরনের হাতের কাজ দেখে। দেশটি ভারী শিল্পের জন্য বিখ্যাত। তাহলে নয় দেশের দশজনকে এত দূর থেকে নিয়ে এসে কেন হাতের কাজ দেখানো? কারণ এই কাজগুলো বহু বছর ধরে চলে আসছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জার্মানির ইতিহাস আর ঐতিহ্য। বার্লিনে মোটামুটি দুটি অভিজ্ঞতার বিবরণ পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি, আরেকটি দুই জার্মানির আলাদা দুই ব্লকে থাকা, আবার এক হওয়া।

এ রকমই এক প্রতিষ্ঠান ফাপ্যাক। এটি মূলত পারিবারিক ব্যবসা, প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। একসময় পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল। বলা যায়, পাঁচ পুরুষের ব্যবসা, কারণ এখন পঞ্চম প্রজন্ম এটি চালাচ্ছে। ঘুরিয়ে দেখানো হলো ফাপ্যাকের পুরো কারখানা। এক অংশে যন্ত্র উৎপাদিত বাক্স, বাকি অংশে কেবলই হাতের কাজ। অভ্যর্থনা রুমে নানা ধরনের বাক্স সাজিয়ে রাখা। এর মধ্যে একটা বাক্সের একটু পরিচয় দিতে পারি। যাঁরা গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল নামের সিনেমা দেখেছেন সেখানে মেন্ডেলস লেখা যে বাক্স ছিল তা ফাপ্যাকের বানানো।

জার্মানির ভারী যন্ত্রপাতি যেমন টেকে অনেক দিন, হাতে তৈরি পণ্যেরও একই গুণ। আমাদের বলা হলো, নিজে ব্যবহার করে পরের প্রজন্মকেও খুব সহজেই দিয়ে দেওয়া যায়। এর সত্যতা জানতেই যেন আমরা গেলাম ফিওনা বেননেটের টুপি তৈরির কারখানায়। টুপি না বলে হ্যাট বলাটাই ভালো। এখানে হ্যাট ফ্যাশনের অংশ। আর ফিওনা বেননেট হ্যাট তৈরিতে শহরের সবচেয়ে নামকরা একজন ফিওনাই অভ্যর্থনা জানালেন। দেখালেন কীভাবে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বানানো হয় হ্যাট। এখানে হাতে তৈরি সব পণ্যের দাম অবশ্য বেশি। সামান্য পছন্দ হয় এমন হ্যাটের দাম দু শ ইউরোর (প্রায় বিশ হাজার টাকা) কম নয়। ফিতনার হ্যাট ক্রেতার তালিকাটা বলা ভালো। ব্যাড পিট, অ্যাস্টন কুপার, হিউ জ্যাকম্যান আর কেট হোমস।

তবে এর চেয়েও হাতে তৈরি সূক্ষ্ম কাজ দেখা গেল মিডিয়ায়। এখানে চশমার ফ্রেম করা হয়। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। চশমার পুরো ফ্রেম হাতে তৈরি করা হয়। এ জন্য আলাদা ডিজাইনার থেকে শুরু করে তাদের রয়েছে একটা গবেষণা দল। এসব চশমার ফ্রেমের দাম কিন্তু অনেক, সবচেয়ে কম দামিটাই পাঁচ শ ইউরো।

আমরা নয় দেশের দশজনের দলটি জার্মানি এসেছি এখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে। বার্লিন ছাড়াও আমাদের নেওয়া হলো পাশের শহর ড্রেসডেনে। এখানে আছে ইউরোপের সবচেয়ে পুরোনো পরসেলিনের পণ্য তৈরির কারখানা। নাম মেইসেন। ১৭১০ সালে কিং অগাস্টাস দা স্ট্রংয়ের সময় এটি তৈরি করা হয়, এখনো চলছে। বিশাল জায়গাজুড়ে কারখানাটি। ঢুকলেই মিউজিয়াম, নানা দেশের পর্যটকের ভিড়। মেইসেন সরকারি মালিকানায় চলে। ৬০০-এর মতো জনবল। প্রশ্ন করে জানলাম প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ চার কোটি ইউরো। খটকা লাগল। এত জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠান অথচ লেনদেন তুলনামূলক কম। যদিও এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরসেলিন কারখানা। লাভ-লোকসান নিয়ে প্রশ্ন করায় খানিকটা কূটনৈতিক উত্তর পাওয়া গেল। বুঝলাম সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাল সৰ জায়গায়ই প্রায় একই রকম।

তবে যত জায়গায়ই গেলাম, একটা বিষয়ে এখানে সবাই বেশ সতর্ক। আর সেটি হলো ডিজাইন বা নকশা। কারখানার যেকোনো জায়গার ছবি তোলা যাবে, কঠোর নিষেধাজ্ঞা কেবল ডিজাইন রুমের জন্য। প্রতিযোগীরা যাতে কোনোভাবেই জানতে না পারে। এই প্রতিযোগীর মধ্যে অন্য কোম্পানি তো আছেই, আরও আছে চীন। দ্রুত আর সস্তায় যেকোনো কিছু তারা বানিয়ে ফেলে।