নতুন বাজারেও ধাক্কা খেল পোশাক খাত

প্রচলিত বা বড় বাজারের মতো নতুন বাজারেও ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। গেল অর্থবছর শীর্ষ ১১ নতুন বাজারের মধ্যে ৮টিতে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। মোট পোশাক রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় নতুন বাজারের হিস্যাও কমে গেছে কিছুটা।

বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে প্রচলিত তিন বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার বা ৮৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। নতুন বাজারে রপ্তানি হয় ৪২৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পোশাক। এটি এর আগের অর্থবছর থেকে দেড় শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৩১ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তখন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের অর্থবছর ছিল ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবেই পোশাক রপ্তানিই কমে গেছে। সেই প্রভাব নতুন বাজারেও পড়েছে। তবে নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়াটা আমাদের জন্য বিপদ সংকেত। কারণ প্রচলিত বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় আমরা নতুন বাজারকে টার্গেট করে এগোচ্ছিলাম।’

ভবিষ্যতে তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়ানো কঠিন হবে। কারণ এসব দেশে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সে জন্য ব্যবসা বাড়াতে নতুন বাজারই ভরসা। কয়েক বছর ধরেই পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এমন যুক্তিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি-সুবিধা চুক্তি, অন্যান্য অশুল্ক বাধা দূর, মেলা আয়োজনের মতো নানা উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করছেন।

বিভিন্ন দেশ থেকে রাশিয়া গত বছর ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দেশটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক। তবে রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তুরস্কে ১৭ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করা আছে। এ ছাড়া মেক্সিকোতে ২০-২৫, ব্রাজিলে ৪০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। সরকারি পর্যায়ে এসব দেশের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় কিংবা শুল্ক হ্রাস করা গেলে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

এদিকে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মোট পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের অবদানও কিছুটা কমে গেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর সামগ্রিক পোশাক রপ্তানির ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ নতুন বাজার থেকে এসেছিল। গত অর্থবছর সেটি কমে ১৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, নতুন বাজারের মধ্যে জাপানে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ৭৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৫৮ কোটি ডলারের পোশাক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে গতবার জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও সাড়ে ৮ শতাংশ। চীনে রপ্তানি হয়েছে ৩৯ কোটি ডলারের পোশাক। এ ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তুরস্কে গত অর্থবছর ৩৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এই বাজারে রপ্তানি কমেছে ১৭ শতাংশ।

অন্যদিকে গত অর্থবছরে রাশিয়ায় ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের ২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলারের চেয়ে ৫২ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছর দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের পোশাক, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পোশাক। বাজারটিতে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া মেক্সিকোয় ১২ কোটি ৪৮ লাখ, ব্রাজিলে ৯ কোটি ৯৮ লাখ, চিলিতে ৫ কোটি ৮৮ লাখ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই চার দেশের মধ্যে চিলিতে রপ্তানি ২৮ শতাংশ বেড়েছ, তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩ এবং মেক্সিকো ও ব্রাজিলে ১৬ শতাংশ করে কমেছে।

নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে সেসব দেশের বাংলাদেশের দূতাবাসকে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে সরকারি পর্যায়ে জোর উদ্যোগ দরকার। নতুন বাজারে আমাদের পণ্যে প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’