জেনেশুনেও হাত গুটিয়ে বিসিক

ঈদুল আজহার পর থেকে এভাবেই ট্যানারির তরল বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে। গতকাল তোলা ছবি l জাহিদুল করিম
ঈদুল আজহার পর থেকে এভাবেই ট্যানারির তরল বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে। গতকাল তোলা ছবি l জাহিদুল করিম

চামড়াশিল্প নগরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কার্যালয়। এই কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একটি ড্রেন গিয়ে মিশেছে পাশের ধলেশ্বরী নদীতে। এ রকম চারটি ড্রেন দিয়ে চামড়াশিল্প নগরের তরল বর্জ্য ঈদুল আজহার পর থেকে ধলেশ্বরীতে গিয়ে পড়ছে। বিসিকের কর্মকর্তারা এভাবে নদীদূষণের বিষয়টি জানলেও প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

চামড়াশিল্প নগরে গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, আগের চেয়ে বেশি হারে বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। ট্যানারিগুলো থেকে তরল বর্জ্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) যাওয়ার পাইপলাইনে ছাড়ার পর তা উপচে রাস্তাঘাট ভাসিয়ে দিচ্ছে। পানিনিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে সেই বর্জ্য ধলেশ্বরীতে গিয়ে পড়ছে। পাশাপাশি সিইটিপির পাশে তৈরি বর্জ্যের পুকুরের এক পাশের বাঁধ ভেঙে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নদীতে পড়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ-সংযোগে ত্রুটির কারণে সিইটিপি গত চার দিন বন্ধ ছিল। এ সময় বর্জ্যের পুরোটাই নদীতে পড়েছে। পাশাপাশি রাস্তাঘাটে আরও বেশি বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য গতকাল সকালে সিইটিপি চালু হয়েছে। তবে নদীতে বর্জ্য পড়া বন্ধ হয়নি।

 সব মিলিয়ে বুড়িগঙ্গার পরে এবার ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে। যদিও বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতেই ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৯৯ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় চামড়াশিল্প নগর। সেখানে ৯২টি ট্যানারি উৎপাদন শুরু করেছে।

শিল্পনগরের যে চারটি স্থান দিয়ে বর্জ্য নদীতে পড়ছে, তার একটির পাশে মহিষকে গোসল করাচ্ছিলেন মুসলিম মিয়া। তিনি বলেন, নদীর পানিতে এত দুর্গন্ধ যে মহিষকে গভীর পানিতে নিয়ে গোসল করাতে হয়। নইলে গন্ধ থেকে যায়।

চামড়াশিল্প নগরে গেলে সিইটিপির সামনে গতকাল দেখা হয় শিল্পনগরের পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হকের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিইটিপি চালু করা হয়েছে। ট্যানারিগুলো দিনে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য উৎপাদন করে। বিপরীতে সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। তারপরও বর্জ্য রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে কেন, জানতে চাইলে দুটি কারণের কথা বলেন। একটি হলো সিইটিপি নির্মাণ ও প্রাথমিকভাবে পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া চীনা প্রতিষ্ঠান জিংসু লিংঝি এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন কোম্পানি সার্বক্ষণিক সিইটিপি চালায় না এবং বর্জ্য টেনে নেয় না। দ্বিতীয় কারণটি হলো ট্যানারির শ্রমিকেরা চামড়ার বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট তরল বর্জ্যের সঙ্গে ছেড়ে দেন। এতে পাইপলাইন আটকে যায়।

চামড়াশিল্প নগরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাখা ৫ একর জমিতে মাটি খনন করে পুকুর তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে এখন কঠিন বর্জ্য ফেলার আস্তাকুঁড় তৈরি হয়েছে। এই আস্তাকুঁড়েরই এক কোনার দেয়াল ও বাঁধ ভেঙে ঈদুল আজহার আগে বর্জ্য নদীতে পড়া শুরু হয়। ৮ অক্টোবর গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় আবাসন প্রকল্প যমযম সিটি নিজেদের গরজে বাঁধ মেরামত করে বর্জ্য নদীতে যাওয়া ঠেকাচ্ছে। যমযম সিটির প্রকৌশলী আল ইমরান ফিরোজ তখন জানিয়েছিলেন, বিসিককে চিঠি দিয়েও বাঁধ মেরামতের বিষয়ে তাঁরা সাড়া পাননি।

গতকাল গিয়ে দেখা যায়, যমযম সিটি যে বাঁধ মেরামত করেছিল তা ভেঙে গেছে। যে আস্তাকুঁড় বর্জ্যে টইটম্বুর ছিল, তার পানির উচ্চতা এখন অনেক কমে গেছে। স্থানীয় ব৵ক্তিরা জানান, সব বর্জ্য নদীতে পড়েছে।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চীনা কোম্পানিকে জরিমানা করা অথবা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ছাড়া সরকারের এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। তিনি জানান, গত সপ্তাহে তিনি বিসিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয়ে জানিয়েছেন।