প্রবীণেরা বেশি কর ছাড় পাবেন

এনবিআরের হালনাগাদ বিধি অনুযায়ী, নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রবীণ নাগরিকেরা করে ব্যাপক ছাড় পাবেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
এনবিআরের হালনাগাদ বিধি অনুযায়ী, নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রবীণ নাগরিকেরা করে ব্যাপক ছাড় পাবেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

আপনি দীর্ঘদিন ধরে কর দিয়ে আসছেন। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন কিংবা বয়সের কারণে আর ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন না। এত দিন প্রতিবছর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন, কর দিয়েছেন। এমনকি করযোগ্য আয় না হলেও রিটার্ন দিয়েছেন। কিন্তু প্রবীণ নাগরিকদের জন্য (৬৫ বছরের বেশি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ ছাড় দিয়েছে।
এনবিআরের হালনাগাদ বিধি অনুযায়ী, নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রবীণ নাগরিকেরা করে ব্যাপক ছাড় পাবেন। বছরে ৩ লাখ টাকার কম আয় হলে কোনো কর দিতে হবে না। মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকার কম আয় হলে প্রবীণদের কর দিতে হবে না। আবার পরপর তিন বছর করযোগ্য আয় না থাকলে আয়কর রিটার্নও দাখিল করতে হবে না। যখন করযোগ্য আয় হবে, তখন রিটার্ন দিলেই হবে। এর মানে হলো, আগের তিন বছর আপনার করযোগ্য কোনো আয় ছিল না। মোটাদাগে বলা চলে, ৩ লাখ টাকার কম আয় ছিল; বছর শেষে রিটার্ন দিয়েছেন। তাহলে এ বছর আপনাকে আর রিটার্নও দিতে হবে না।
অন্যদিকে গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সবার বয়সই ৬৫ পেরিয়ে গেছে। তাঁরাও প্রবীণ। তবে তাঁদের ছাড় আরও বেশি। তাঁদের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। আবার বয়সের কারণে অনেক করদাতা কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। এমন করদাতারাও ছাড় পাবেন। তাঁদের বার্ষিক আয় পৌনে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবারও আগামী ৩০ নভেম্বর রিটার্ন জমার শেষ দিন।
এ দেশের প্রবীণ নাগরিক বা অবসরে চলে যাওয়ার পর তেমন আয় থাকে না। কিন্তু চাকরিজীবনে প্রতিবছরই রিটার্ন দিয়ে আসছেন। এখন তো আয় নেই। তাহলে তাঁরা কী করবেন? যেহেতু করযোগ্য আয় নেই, তাই পরপর তিন বছর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তৃতীয় বছরে যে কর অঞ্চলে রিটার্ন জমা দেবেন, সেই কর অঞ্চলে একটি আবেদন করতে হবে, যেন আপনার কর নথিটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা মঞ্জুর করবেন সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা। পরের বছর থেকে আর রিটার্ন না দিলেও চলবে। এই সুবিধা অবশ্য সব করদাতার জন্যই প্রযোজ্য।
অবসরের পর অনেকেই বাড়িভাড়া থেকে আয় করেন। মনে রাখতে হবে, মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িভাড়া পান এবং ১২ মাসই ভাড়া পেলেন; তাহলে অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে দেবে। আবার অনেকেই অবসরের পর কিছু টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। তাঁরা ওই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগ রেয়াত নিতে পারবেন।
করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক—কিছু ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিকদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। যেমন প্রবীণ নাগরিক যদি ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের মতো অভিজাত ক্লাবের সদস্য হন, তবে তাঁকে রিটার্ন দিতে হবে। তিনি যদি কোনো গাড়ির মালিক হন, তবু রিটার্ন দিতে হবে। ৬৫ বছরের বেশি নাগরিকেরা ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখাতে হবে।
প্রতিবছরই দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত কর মেলায় রিটার্ন জমাসহ যেকোনো কর সেবা দিতে প্রবীণদের জন্য আলাদা বুথ করে এনবিআর। সেখানে বয়স্ক নাগরিকদের সেবা দেওয়া হয়। প্রবীণ নাগরিকেরা কর সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যই সেখান থেকে জানতে পারবেন। রিটার্নও জমা দিতে পারবেন।