কার্যক্রম গোটাতে দীর্ঘ তালিকা অ্যাকর্ডের

বাংলাদেশে কার্যক্রম গোটাতে দীর্ঘ কর্মতালিকা দিয়েছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। তারা বলেছে, অ্যাকর্ডের দায়িত্ব বুঝে নিতে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পোশাক কারখানা পরিদর্শনের দক্ষতা দেখাতে হবে। এ ছাড়া কারখানার ঝুঁকি দূর, নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, সুশাসনে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সংস্কারকাজে অগ্রগতি এবং শ্রমিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত ও ন্যায্য সমাধান দেখাতে হবে।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে অ্যাকর্ড তাদের কার্যক্রম গোটানো নিয়ে এই কর্মতালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, আগামী বছরের মে মাসের পরেও অ্যাকর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সরকার অনুমতি দিয়েছে। কারখানা পরিদর্শন, সংস্কারকাজ চালানো ও শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের সংস্থা সক্ষমতা অর্জন করার পরই দায়দায়িত্ব হস্তান্তর করবে অ্যাকর্ড। তবে সরকার বলেছে, চলতি মেয়াদের পর শর্ত সাপেক্ষে জোটের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়তে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯ অক্টোবর অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ট্রেড ইউনিয়ন, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সরকারের বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। আসছে বছরের মে মাসের পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যক্রম চালাতে প্রস্তুত অ্যাকর্ড। এরপরে সরকারের সংস্থার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত জোটের চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ডের জন্য উৎপাদন করা শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে অ্যাকর্ড প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। আসছে বছর উভয় জোটের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অ্যালায়েন্স কার্যক্রম গোটাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর সর্বোচ্চ ছয় মাস নেবে। আর গত জুনে অ্যাকর্ড ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে তারা। তবে সরকার ও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আপত্তির কারণে আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসে অ্যাকর্ড।
দায়িত্ব হস্তান্তরে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোটের দেওয়া কর্মতালিকার বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মতালিকা অনুযায়ী সক্ষমতা অর্জন সম্ভব। সে জন্য কিছুটা সময় তো লাগবেই। সেই ভাবনাচিন্তা থেকেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য রায় রমেশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, সারা জীবন বাইরের কারও কাছে নির্ভরশীল থাকার সুযোগ নেই। সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করলে অ্যাকর্ডের কর্মতালিকা অনুযায়ী সক্ষমতা অর্জন কোনো ব্যাপারই না। মালিকদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের শুধু নেতিবাচক মনোভাব না দেখিয়ে সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সঙ্গে সরকার ও বিজিএমইএর ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারের সংস্থা অ্যাকর্ডের দায়িত্ব বুঝে নিতে সক্ষমতা অর্জন করেছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ করবে যৌথ তদারকি কমিটি। এতে সরকার, বিজিএমইএ, আইএলও, অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি বছরে দুবার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে। কমিটি যখন নিশ্চিত হবে সরকারের সংস্থা সক্ষমতা অর্জন করেছে তখন থেকে অ্যাকর্ডের মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি পাবে। তারপরই দায়িত্ব হস্তান্তর করবে ইউরোপীয় ক্রেতাদের এই জোট।
অ্যাকর্ডের বিবৃতিতে এসব কথা বললেও বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অ্যাকর্ড কার্যক্রম ৩১ মে শেষ হচ্ছে। তারপর তারা চলে যাবে। তবে সরকারি সংস্থার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে অন্তর্বর্তী সময়ের প্রয়োজন হবে এবং সেটি ছয় মাসের জন্য। এটিকে বলা হবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন অ্যাকর্ড’।
ইউরোপীয় জোটটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অ্যাকর্ডের নতুন চুক্তিতে ইতিমধ্যে ৪৭ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান স্বাক্ষর করেছে, যাদের পোশাক উৎপাদনে জড়িত আছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানা। তবে বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন অ্যাকর্ডের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বর্তমান মেয়াদের পর পুরোনো নাকি নতুন সংস্করণের নিয়মকানুন প্রয়োগ করা হবে, সেটি খোলাসা করেনি তারা। কিন্তু নতুন নিয়ম কার্যকর হলে পোশাক খাতের সরবরাহব্যবস্থায় থাকা সুতা, বস্ত্র, সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্য উৎপাদনের কারখানা পরিদর্শন ও কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়টি তদারকি করার অধিকার পাবে জোট।
এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, সরকার ও বিজিএমইএ এবং অ্যাকর্ডের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেটি ইতিমধ্যে কমানো গেছে। ভবিষ্যতে কোন নিয়মে চলবে, সেটি গত বৈঠকে পরিষ্কার হয়নি। তবে তদারকি কমিটির প্রথম বৈঠকেই অনেক ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করব।
সরকারকে যা করতে হবে
 পোশাক কারখানা পরিদর্শনের দক্ষতা
 কারখানার ঝুঁকি দূর
 নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
 সুশাসনে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সংস্কারকাজে অগ্রগতি
 শ্রমিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত ও ন্যায্য সমাধান