এ বছরের মধ্যে ফোরজি চালুর সম্ভাবনা ক্ষীণ

চলতি বছরের মধ্যে দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, ভালো মানের সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গ ও প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মূল্য কমানোর বিষয়ে সরকার কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ ছাড়া ফোরজি নীতিমালার ক্ষেত্রে তাদের ২৩টি আপত্তির ২২টিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসব সমস্যা দূর করে এ বছরের মধ্যে ফোরজি চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ফোরজি নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছিলেন।

বৈঠকে সজীব ওয়াজেদ জয় অপারেটরদের দাবি মেনে ফোরজি নীতিমালা সংশোধনে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন। এরপর গত সপ্তাহে বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, এতে ফোরজি নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ নীতিমালার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দেওয়া সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এখনো বিটিআরসিতে যায়নি। লিখিত নির্দেশনা ছাড়া বিটিআরসি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

এদিকে ফোরজি নীতিমালার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত সোমবার মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসির একটি বৈঠক হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ চার অপারেটরের প্রধান নির্বাহী ও কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার দাম মেগাহার্টজপ্রতি ২০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিটিআরসি। অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটররা মেগাহার্টজপ্রতি তরঙ্গের দাম সর্বোচ্চ ১৬ কোটি টাকা দিতে চায়।

জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার দাম নির্ধারণে বিটিআরসি চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে খুব শিগগির একটা সমাধানে আসা সম্ভব হবে।

প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা হলো যেকোনো তরঙ্গে যেকোনো প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার সুবিধা। বাংলাদেশে মুঠোফোন অপারেটররা বর্তমানে দ্বিতীয় (টুজি) ও তৃতীয় (থ্রিজি) প্রজন্মের সেবার জন্য তিনটি আলাদা ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহার করে। এই তিনটি ব্যান্ড হলো ৯০০, ১ হাজার ৮০০ ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেলে এই তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গ দিয়েই টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা দিতে পারবে মুঠোফোন অপারেটররা।

ফোরজি নীতিমালা নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের অন্যান্য আপত্তির মধ্যে ছিল স্থানীয় উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগের সুবিধা, কল রেকর্ডের তথ্য ১২ বছরের পরিবর্তে ২ বছর করা, সরকারের সঙ্গে আয় ভাগাভাগির অনুপাত কমিয়ে আনা ইত্যাদি।

আইসিটি উপদেষ্টার সঙ্গে অপারেটরদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ফোরজিতে নতুন বিনিয়োগের জন্য বিদেশ থেকে অর্থ আনার পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকেও অর্থের সংস্থান করা যাবে। বর্তমান নীতিমালায় শুধু বিদেশ থেকে অর্থ এনে বিনিয়োগ করার শর্ত রয়েছে। করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) মাধ্যমে অর্থ খরচ করতে হলে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে নীতিমালায় পরিবর্তন আনার কথাও ওই বৈঠকে বলা হয়। এ বিষয়ে অপারেটরদের যুক্তি হলো, সিএসআরের অর্থ অনুমতি নিয়ে খরচ করতে হলে সেটি রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ আছে।